নিজস্ব প্রতিবেদক
বাঁশখালী উপকূলে সবচেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় প্রবন এলাকা খানখানাবাদ। এই এলাকার মানুষের কাছে হাসান এন্ড ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি খুবই পরিচিত। ২০২৩ সালে শেষ হওয়া ২৯৩ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে টানা ছয় বছর ধরেই বড় অংশের কাজ করেছে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার দুই বছরের মধ্যেই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন অনুমোদিত মেগাপ্রকল্পে একই এলাকায় দুটি প্যাকেজের কাজ পেয়েছে হাসান এন্ড ব্রাদার্স। বিতর্কিত এই ঠিকাদার আবারও কাজ পাওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ২৯৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি ছিল লুটপাটের প্রকল্প। এই লুটপাটে জড়িত ছিল হাসান এন্ড ব্রাদার্স। সে সময় এই প্রতিষ্ঠানের বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ নিম্নমানের ছিল। যা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ আছে। আবারও একই ঠিকাদার কাজ পাওয়ায় কাজ কেমন হবে তা নিয়ে সন্দিহান। কারণ এই প্রতিষ্ঠান আগে যাদেরকে সুবিধা দিয়ে কাজ করেছিল তারা এবারও সাব ঠিকাদারি নিতে নড়েচড়া করছে। এবার বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে কোন অনিয়ম হলে উপকূলবাসী কঠোর আন্দোলনে নামবে। ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে এই প্রকল্পে যাতে কোনরূপ অনিয়ম না হয় সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।
বাঁশখালীর খানখানাবাদ বিএনপি নেতা জাহেদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আগের যে প্রকল্পের কাজ হয়েছে তা ছিল লুটপাটে ভরা একটি প্রকল্প। সেসময় হাসান এন্ড ব্রাদার্সের পুরো কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছে অন্যরা। এই ঠিকাদারের কাজের মান খারাপ ছিল বলেই বাঁধের অবস্থা খারাপ হয়েছে। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছি এবার ঠিকাদার যাতে কোন সাব ঠিকাদারি না দেয়। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় কি কাজ হবে তার সাইনবোর্ড টাঙাতে হবে।’
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খ.ম জুলফিকার তারেক পূর্বদেশকে বলেন, ‘পুরানো প্রকল্পে সাঙ্গু নদীর মোহনার কারণে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসময় ডিজাইনেও কিছুটা গড়মিল ছিল। নদী কাছে চলে আসায় বাঁধ টেকসই হয়নি। হাসান এন্ড ব্রাদার্স বাঁশখালীর ছনুয়া ও আনোয়ারায় ভালো কাজ করেছে। সেখানে কোন সমস্যা হয়নি।’
পাউবো সূত্র জানায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক মেগাপ্রকল্পে ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।এরমধ্যে আনোয়ারা অংশে ব্যয় হবে ৩৬৫ কোটি টাকা ও বাঁশখালী অংশে ব্যয় হবে ৫০৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে বাঁশখালী অংশেপ্রায় ৭০ শতাংশ কাজ পেয়েছে প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (পিডিএল)। এই প্রতিষ্ঠানটি খানখানাবাদ, ছনুয়া ও সাধনপুর অংশে কাজ পেয়েছে। বাকি কাজ পেয়েছে জামিল ইকবাল ও হাসান এন্ড ব্রাদার্স। হাসান এন্ড ব্রাদার্স দুটি প্যাকেজে খানখানাবাদ ও বাহারছড়ায় কাজ পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাসান এন্ড ব্রাদার্স নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ মে একনেকে অনুমোদন হওয়া বাঁশখালীর বেড়িবাঁধ প্রকল্পের বড় অংশের কাজ করেছিল হাসান এন্ড ব্রাদার্স। ২০২৩ সালেএ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এ প্রকল্প নির্মাণের দুই বছরেই খানখানাবাদ অংশে বেড়িবাঁধের বড় ধরনের ভাঙ্গন হয়েছে। সেসময় পুকুরিয়া, সাধনপুর, খানখানাবাদ, ছনুয়া ও বাহারছড়ায় কাজ করেছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় কাজ নিয়ে যথাসময়ে কাজ শেষ করতে না পারার অভিযোগে যে ১৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে কাজ না দেয়ার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেখানে এই প্রতিষ্ঠানটির নামও ছিল। যদিও প্রতিষ্ঠানটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রচুর কাজ করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুইজন ঠিকাদার বলেন, এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদের ভালোই সখ্যতা। এই প্রতিষ্ঠান সেসময় কাজ ভাগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, জাপা নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ারের নাম বিক্রি করতো। তবে এবার এই ঠিকাদারকে সুবিধা দিয়েছে পানি বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজীর সাইফ আহমেদ।
হাসান এন্ড ব্রাদার্সের প্রকল্প প্রকৌশলী রুদ্র শাহরিয়ার পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাদের কাজের মান নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। আমরা আনোয়ারায় টেকসই কাজ করেছি। সেখানে কোন সমস্যা হয়নি। খানখানাবাদে ডিজাইনের ভুলে কারনে ছোট সাইজের ব্লক দেয়া হয়েছে। একই কাজে আনোয়ারায় আরো ভারী বøক বসানো হয়েছে। মেগাপ্রকল্পে কাজ পাওয়ার পেছনে কোন অনিয়ম হয়নি। আমরা তিনদফা নি¤œরেট দিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছি। শেষমেষ দুটি কাজ পেয়েছি।’