লামায় ২৬ রাবার শ্রমিককে অপহরণ, মুক্তিপণ দাবি

3

লামা প্রতিনিধি

এবার বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ৫টি রাবার বাগান থেকে ২৬ শ্রমিককে অপহরণ করেছে সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। গত শনিবার রাত দেড়টার দিকে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি মুরুংঝিরি এলাকা থেকে তাদেরকে অপহরণ করা হয়েছে।
অপহৃতরা ফোরকান ও শাহজাহান, নুরু মোহাম্মদ কোম্পানি, আহসান উল্লাহ কোম্পানি, হুমায়ুন কোম্পানি ও সোনামিয়া কোম্পানির রাবার বাগানের শ্রমিক বলে জানা গেছে।
রাবার বাগানের একজন মালিক জানান, ২৬ শ্রমিককে অপহরণ করেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। তারা শ্রমিকদের জন্য মুক্তিপণ দাবি করেছে।
অপহৃতরা হলেন মো. ফারুক (২৬), মো. আইয়ুব আলী (২৬), মো. সিদ্দিক (৪০), মো. আব্দুল খালেক (২০), আব্দুল মাজেদ (১৭), মনিরুল ইসলাম (৩০), জিয়াউর রহমান (৪৫), মো. মোবারক (২৫), মো. হারুল (৩০), সৈয়দ নুর (২৮), রমিজ উদ্দিন (৩০), মো. কায়ছার (৩৮), মো. মনির হোসেন (৩৫), মো. ইমরান (১৭), মঞ্জুর (৩০), আফসার আলী (২৫), মো. খাইরুল আমিন (৩০), আবু বক্কর (২৯), আবদুর রাজ্জাক (৩৩) ও মো. মবিন (২৫)।
তারা সবাই কক্সবাজার জেলার রামু ও ঈদগাহ এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাসিন্দা। অপর ৬ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বাগান মালিকের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ে অপহরণকারীরা শ্রমিকদের অপহরণ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন লামা থানার ওসি মো. শাহাদাৎ হোসেন।
তিনি বলেন, এর আগে গত জানুয়ারি ও চলতি ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে দুই দফায় ১০ জনের বেশি শ্রমিককে অপহরণ করা হয়েছিল।
ওসি আরও বলেন, শ্রমিক অপহরণের খবর পাওয়ার সাথে সাথে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ অপহৃতদের উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। ঘটনাস্থল দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অপহরণের সুযোগ পাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ অপহৃতদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পাহাড়ি একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গত দুই-আড়াই মাস ধরে উপজেলার সরই, গজালিয়া, লামা সদর ইউনিয়ন ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি অপহরণসহ নানা অপকর্ম করে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় শনিবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে পৃথক ৫টি রাবার বাগান থেকে ২৬ শ্রমিককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তুলে নিয়ে যায়।বাগানের মালিক মো. শাহজাহান জানান, সন্ত্রাসীরা তার বাগান থেকে ১২ জনকে নিয়ে গেছে। কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীরা তাদের কাছে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে তাদেরকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণের পর তার কাছে ৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। শুনেছি অপহৃত অন্যদের কাছ থেকেও পৃথক মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে।
২৬ শ্রমিককে অপহরণের ঘটনায় রাবার, তামাক, গাছ, পাথর, বাঁশ শ্রমিকসহ স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানান ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মংমেগ্য মার্মা। তিনি জানান, ঘটনাস্থল দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ও দুই উপজেলার সীমানায়। সেখানে নেটওয়ার্ক না থাকায় বিস্তারিত খবর জানা যাচ্ছে না।
ইউপি সদস্য জিয়াবুল হক বলেন, দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের অপহরণ করে থাকতে পারে। সা¤প্রতিক বান্দরবানের লামাসহ আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে উপজেলার গজালিয়ার একটি রাবার বাগানের এক শ্রমিক, এর দুইদিন পর হিলটপ এগ্রো লিমিটেডর বাগান ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলামকে অপহরণ করা হয়। কয়েকদিন পর বমুখাল এলাকা থেকে সন্ত্রাসীরা ৭ তামাক শ্রমিক ও সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি ৬ গাছ কাটা শ্রমিককে অপহরণ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।