মো. শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান
হঠাৎ করে বান্দরবানের লামা উপজেলায় চাঁদার দাবিতে অপহরণ যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। গেলো দুই মাসে উপজেলার দুর্গম এলাকায় বেশ কয়েকটি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একাধিক অপহরণ চক্র গড়ে তুলেছে। চাহিদামতো মুক্তিপণ না পেলে মারধর ও হত্যার হুমকিও দিচ্ছে তারা। যতদিন যাচ্ছে অপহরণকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। উপজেলার ফাসিয়াখালী, সরই, গজালিয়া ইউনিয়নে একাধিক ঘটনায় প্রায় ৪০ জনের বেশি শ্রমিককে অপহরণ করেছে সন্ত্রাসীরা। যার কারণে রাবার, তামাক, গাছ, পাথর, বাঁশ শ্রমিকসহ স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে আতংক।
এদিকে জেলার লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার উঁচু নিচু ভূমিতে চাষ হয় রাবারের। আর এসব রাবার বাগানে কাজ করে কয়েক হাজার শ্রমিক। লামার সরই এলাকার রাবার বাগানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত শিমন ত্রিপুরা ও জ্যাকসন ত্রিপুরা। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে কাজ ছেড়ে দিয়ে লিপ্ত হয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে। শুরু করে একের পর অপহরণ। গেল দুই মাসে লামা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অপহরণ করে ৪০ জনের বেশি শ্রমিককে। তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করে মোটা অংকের টাকা। এর ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মাঝে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকলেও দুর্গম এলাকা ও সহজ যাতায়াত না থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় অপহরণকারীরা। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আদায়কৃত মুক্তিপণের টাকা তুলতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে অপহরণ চক্রের ২ সদস্য। পরে তাদের দেয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অপহরণ চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী একটি গ্রæপ গেলো দুই মাস ধরে লামা উপজেলার সরই, গজালিয়া ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি অপহরণসহ নানা অপকর্ম করে আসছে। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায় বিভিন্ন শ্রমিকদের। এসব অপহরণের ঘটনায় শ্রমিককেরা কাজে কর্মে যেতেও ভয় পাচ্ছে। যার কারণে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে আতংক।
রাবার বাগান মালিকদের মতে, শ্রমিকদেরকে তুলি নিয়ে অনেক নির্যাতন করা হয়েছে এবং প্রথমে ২ লক্ষ টাকাসহ প্রায় ৬/৭ লক্ষ টাকা দেওয়া পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সাংবাদিক মো. কামরুজ্জামান বলেন, লামা উপজেলায় পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যাপক হারে অপহরণ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে দ্রুত চিরুনী অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। তার মতে, পাহাড়ী এই সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডে দুর্গম এলাকার খেটে খাওয়া মানুষগুলো অপহরণের ভয়ে মাঠ পর্য়ায়ে কাজ করতে ভয় পাচ্ছে।
মানবধিকার কর্মী মো. রুহুল আমিন বলেন, লামা উপজেলায় প্রায় ৮শত রাবার বাগান এবং ২০ হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছে। ইদানিং লামায় পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। তাদের এসব কর্মকান্ডের ভয়ে শ্রমিককেরা বেকার হয়ে পড়েছে। তিনি দাবি করেন, এই সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের মাধ্যমে যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাউছার বলেন, যে কোন ঘটনা ঘটলে মানুষের মাঝে আতংক দেখা দেয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আদায়কৃত মুক্তিপণের টাকা তুলতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে অপহরণ চক্রের ৪ সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে অপহরণের কথা স্বীকার করে আটককৃতরা এবং অপহরণের ঘটনায় জড়িত অন্যদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।