লবণের উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা, বিক্রি ৩.৫০

1

পেকুয়া প্রতিনিধি

দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হওয়া সত্তে¡ও লবণ শিল্প আজ অস্তিত্ব সংকটে। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এবং সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর লবণ চাষিরা। ‘সাদা সোনা’ খ্যাত এই শিল্প এবং এর সাথে জড়িত লক্ষাধিক মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় অবশেষে তারা সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন। ১৭ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সভায় শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের হাতে ১৪ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দেন আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
পরিবেশ বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’র (ধরা) পেকুয়া উপজেলা কো-অর্ডিনেটর দেলওয়ার হোসাইন এবং লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাব উদ্দিন চাষিদের পক্ষে এই দাবিগুলো উপস্থাপন করেন। সভায় লবণ শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজন উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত লবণের প্রায় ৯৫ শতাংশই আসে কক্সবাজার থেকে, বাকি ৫ শতাংশ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনর (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশের চাহিদা মিটিয়েও ২ লক্ষ ২২ হাজার মেট্রিক টন লবণ উদ্বৃত্ত ছিল এবং অনুক‚ল আবহাওয়ায় চলতি মৌসুমেও উৎপাদন ভালো। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে চাষিদের খরচ হয় প্রায় ১৫ টাকা, অথচ সিন্ডিকেটের কারসাজিতে তারা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন মাত্র ৩ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে। অন্যদিকে এ লবণই প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে বিক্রি করছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। এই বিশাল বৈষম্যের শিকার হয়ে চাষিরা লবণ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, যা দেশের একমাত্র স্বনির্ভর এই শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং এ সম্ভাবনাময় লবণ শিল্পকে রক্ষা করার জন্য চাষিদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি জরুরি ও সুনির্দিষ্ট দাবি পেশ করা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে প্রধান হল- লবণের একটি যৌক্তিক ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে তা নিশ্চিত করা এবং দালাল ও সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত পরিবেশে লবণ বিক্রির সুযোগ তৈরি করা। একইসাথে লবণের সঠিক ওজন নিশ্চিত করতে ডিজিটাল মিটারের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়েছে। চাষিরা আরও দাবি করেছেন- যেন মৌসুম শুরুর আগেই সরকার লবণের দাম এবং জমির খাজনা নির্ধারণ করে দেয় এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়।
চাষিদের স্বার্থ সুরক্ষায় সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা লবণ সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ক্রয় করার দাবি তুলেছেন। পাশাপাশি অবিলম্বে একটি ‘লবণ বোর্ড’ গঠন এবং কক্সবাজারে একটি সরকারি লবণ শিল্প কারখানা স্থাপনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা এবং সহজ শর্তে বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবিও এর অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া লবণ চাষিদের সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত করা এবং জমির মালিকদের দ্বারা কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া চাষিদের উচ্ছেদ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে। ওয়াকফ এস্টেটের জমি কোনো একক ব্যক্তিকে ইজারা না দিয়ে সরাসরি চাষিদের বর্গা দেওয়ার নিয়ম চালুর কথা বলা হয়েছে। চূড়ান্তভাবে, লবণ চাষের জন্য উপযুক্ত জমিতে অন্য কোনো ধরনের প্রকল্প স্থাপন না করার দাবিও তুলে ধরা হয়েছে এ ১৪ দফার মধ্যে।
সভায় বিসিক চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম, লবণ চাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এজেএম গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী, কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ জামিল ইব্রাহিম, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খোকনসহ মিল মালিক, ব্যবসায়ী ও বাজারজাতকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন এবং বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভ‚ঁইয়া ভার্চুয়ালি সভায় যুক্ত ছিলেন।