লবণাক্ততায় নষ্ট হয়ে গেছে অধিকাংশ নিষিক্ত ডিম

23

হালদা থেকে সংগৃহীত কার্প জাতীয় মা-মাছের নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু পরিস্ফুটন কাজে এত বেশি জৌলুস নেই। খুশির আমেজের বিপরীতে ডিম সংগ্রহকারীদের রেণু পরিস্ফুটনে কাজে পড়েছে ভাটা। ফলে সংগৃহীত ডিম সনাতন পদ্ধতির মাটির কুয়ায় ফোটাতে গিয়ে লবণাক্ত পানির কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাদের হতাশা আরো বেড়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে হালদারপাড় ঘুরে দেখা গেছে, রেণু পরিস্ফুটনের জন্য তৈরিকৃত অধিকাংশ ডিম সংগ্রহকারীদের মাটির কুয়ায় ডিম ও রেণু নষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে হালদা নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের লবণাক্ত পানি মাটির কুয়ায় ঢুকে পড়ায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকার ডিম সংগ্রহকারী মো. জয়নাল।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এবার ডিম কম পাওয়ায় আমরা ডিম আহরণকারীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের নিয়োগকৃত লোকজনের মজুরি, নৌকা ও সরঞ্জাম ভাড়া পুষিয়ে ওঠা কষ্ট সাধ্য হবে। তারমধ্যে ধার-কর্জ করে প্রতি নৌকায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে।
ওই সময় জয়নালের সাথে থাকা মো. ফারুক নামে আরেক ডিম সংগ্রহকারী জানান, হালদা নদীতে জোয়ারের পানিতে লবণাক্ত হওয়ার বিষয়টি আমাদেরকে সংশ্লিষ্টরা যথাসময়ে অবহিত করেনি। একদিন পরে তারা আমাদের বিষয়টি জানিয়েছে। ততক্ষণে নদী থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু পরিস্ফুটের জন্য রাখা কুয়ায় লবণাক্ত পানি ব্যবহার করায় আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় কিছু কিছু হ্যাচারিতেও ডিম নষ্ট হয়েছে। যদিও বিষয়টি তারা অজ্ঞাত কারণে গোপন রেখেছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করা শর্তে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা এক মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, হালদায় মা-মাছের দেয়া সংগৃহীত নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু পরিস্ফুটনে কুয়ায় লবণাক্ত পানি ব্যবহার করায় এমনটা হয়েছে। তবে হ্যাচারিতে কোন ডিম বা রেণু নষ্ট হয়নি বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
আজ রবিবার থেকে রেণু বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের মাছুনাঘোনা এলাকার ডিম আহরণকারী মো শফি। এবার ডিম কম সংগৃহীত হওয়ায় দামও বেশি হবে বলে মত প্রকাশ করেন মাছুনাঘোনা হ্যাচারিতে অবস্থান করা একাধিক ডিম আহরণকারী। এছাড়া গড়দুয়ারা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী বাবুল জলদাশ জানান, এবার যে পরিমাণ ডিম পাওয়া গেছে এতে তাদের পরিশ্রমের টাকাও হবে না। তাছাড়া মাটির কুয়ায় ডিম ফোটানোর জন্য রাখা অনেকের ডিম নষ্ট হওয়ায় রেণুর পরিমাণ অনেক কমে গেছে। ফলে এবার ডিম কম পাওয়ায় রেণুর দাম প্রতি কেজি লক্ষাধিক টাকা নির্ধারিত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, দুপুরে হালদা নদী থেকে সংগৃহীত কার্প জাতীয় মা-মাছের নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু পরিস্ফুটন কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ এনডিসি। তিনি হাটহাজারী উপজেলা গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকায় নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু পরিস্ফুটন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী, হাটহাজারীর ইউএনও রুহুল আমিন, রাউজানের ইউএনও জোনায়েদ কবির সোহাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরীফ উল্যাহ, জেলা মৎস্য অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মাইসুরা ইয়াসমিন, রাউজানের পিআইও নিয়াজ মোর্শেদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলীসহ বিভিন্ন দফতরের কর্তকর্মারা উপস্থিত ছিলেন।
গত বুধবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে পূর্ণমাত্রায় হালদা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় ডিম ছাড়ে মা-মাছ। মধ্যরাত থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ৩৪৩টি নৌকায় ৮০৬জন ডিমসংগ্রকারী মা-মাছের সাড়ে ৬ হাজার কেজি নিষিক্ত ডিম আহরণ করে। সংগৃহীত ডিম হাটহাজারী ও রাউজান অংশে সরকারি ৪টি হ্যাচারিতে গোলাকার ও আয়তাকার মিলে মোট ১৫০টি এবং ১৬৫ সিমেন্ট ও সনাতন পদ্ধতিতে ১৭৫টি মাটির কুয়ায় নিরাপদে রেণুতে পরিস্ফুটন করা হয়েছে। এসব ডিম থেকে প্রায় ১২০-১৩০ কেজি রেণু উৎপাদন হতে পারে বলে অনুমাণ করা হচ্ছে। তবে এবার মা-মাছের দেয়া সংগৃহীত নিষিক্ত ডিমের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় এক-চতুথাংশেরও কম। ফলে এ বছর আশানুরূপ ডিম আহরণ করতে না পারায় ডিম সংগ্রহকারীদের মাঝে হতাশার ছাপ পরিলক্ষিত হয়। বিশেষজ্ঞরা আগের বছরের তুলনায় এক-চতুথাংশেরও কম ডিম ছাড়ায় হালদায় মা-মাছের ‘অস্বাভাবিক’ প্রজনন বলছেন। এক্ষেত্রে ঘুর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এবং সামুদ্রিক জোয়ারে লবণের মাত্রাতিরিক্ত আগ্রাসনের প্রভাবকে তারা দায়ী করছেন।