লক্কর-ঝক্কর গাড়ির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে

8

উন্নয়নশীল কাতারে আমাদের এ দেশ। ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার বদ্ধপরিকর। সেই স্বপ্ন যাত্রায় সর্বত্র চলছে আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তি নির্ভর কার্যক্রম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এখনও সেই মন্ধ্যতা আমলের ন্যায় ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারায় চলে গাড়ি। যাত্রী পরিবহনগুলোর বডি, ইঞ্জিন ও ব্যাকসাইড দেখলে ভয়ে কাঁপে মন। এতো- মেরে দিচ্ছে না তো! স্ট্রাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না তো! কোন দূর্ঘটনা ঘটছে না তো! কাঁপা কাঁপা মনে ভয়ে পথ চলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারলেই বাঁচা! এভাবে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের নিত্যদিনের গণপরিবহণের যাত্রী হয়ে অফিস-আদালত, ব্যবসা কিংবা স্কুল-কলেজে, হাটেঘাটে যেতে হয়। এসব গাড়ি থেকে শুরু করে মোটরসাইকেল কেউ ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালান না। হেরমেট ছাড়া চলে মোটর সাইকেল, লআইসেন্স ছাড়া চলে বাস, মিনিবাস, মাইক্রে, কার, টেম্পো, অটোরিকশা ইত্যাদি। গাড়ি রাস্তায় নামানোর পর নির্দিষ্ট মেযাদ শেষ করে আরো কয়েকবছর চালানোর পর যখন বিআটিএ ও ট্রাফিক পুলিশের অভিযানের কবলে পড়ে তখন নানাভাবে ম্যানেজ কওে লক্কর-ঝক্কর গাড়িগুলো সড়ক দখল কওে চলে। এতে সাধারণ যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় গন্তব্য পাড়ি দেন। এসব গাড়ি নগরীর পরিবেশ ও সৌন্দর্য বিনষ্ট করে। তাই প্রয়োজন কঠোর হাতে এসব গাড়ি সড়ক থেকে সরানোর উদ্যোগ নেয়। গতকাল রবিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির (আরটিসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরিপে বাদ পড়া বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার এবং অটোটেম্পুগুলো কোনোভাবেই নগরীর রুটে চলতে পারবে না। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে এখনও বিভিন্ন রুটে অবাধে চলাচল করছে এসব গাড়ি। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে যেসব গাড়ি বাতিল হয়েছে, তা চূড়ান্তভাবে বাতিলের জন্য আইনগত বিষয় চলমান। যখন পুরোপুরি বাতিলের সিদ্ধান্ত হবে, তখন আমরা পুরো নগরীতে জোরেশোরে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের ২৩ মে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির অনুমোদিত রুটসমূহে ইস্যুকৃত রুট পারমিটের মধ্যে কত সংখ্যক বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার ও অটোটেম্পু চলাচল করে এবং কতগুলো চলাচল করে না তার রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখপূর্বক রুটভিত্তিক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) এর নেতৃত্বে বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার ও অটোটেম্পু জরিপ কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি কর্তৃক বিদ্যমান রুটসমূহে রুটপারমিট ইস্যুকৃত বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার ও অটোটেম্পু ও নতুন রুট পারমিটের জন্য আবেদনকৃত মোটরযান জরিপের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। যা গত ২ ফেব্রুয়ারি কমিটির কাছে উপস্থাপন করেন আরটিসির সদস্য সচিব ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো. মাসুদ আলম।
দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির অনুমোদিত ও রুট পারমিট ইস্যুকৃত ১১৩০টি বাস-মিনিবাসের মধ্যে ৯৩০টি, হিউম্যান হলারের ৯৫৯টির মধ্যে ৮২৮টি এবং অটোটেম্পুর ২১৯৩টিসহ নতুন আবেদনকৃত ৪৩৭টি’র মধ্যে মোট ২৫৩০টি এবং বাস-মিনিবাসের নতুন রুট পারমিটের জন্য আবেদনকৃত ১৮৩টির মধ্যে ১১০টি, হিউম্যান হলারের ৬৮০টির মধ্যে ৪৩২টি জরিপ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়। জরিপে উপস্থিত ৯৩০টি বাস-মিনিবাসের মধ্যে সঠিক ৩৮৪টি, ইঞ্জিন পরিবর্তনকৃত ২২৬টি, ইঞ্জিন পাঞ্চ বা খোদাইকৃত ২৪টি, ইঞ্জিন অস্পষ্ট ও ঘষামাজা ২৯৬টি এবং নতুন রুট পারমিটের জন্য আবেদনকৃত ও জরিপে উপস্থিত ১১০টি বাস-মিনিবাসের মধ্যে সঠিক ৬১টি, ইঞ্জিন পরিবর্তন ২৫টি, ইঞ্জিন পাঞ্চ ও খোদাইকৃত ১টি, ইঞ্জিন অস্পষ্ট ও ঘষামাজা ২৩টি। জরিপে উপস্থিত ২০৯৪টি অটোটেম্পুর মধ্যে সঠিক ১৫৩৪টি, চেসিস অস্পষ্ট ৪৯৬টি, চেসিস খোদাইকৃত ৬৪টি এবং নতুন রুট পারমিটের জন্য আবেদনকৃত ও জরিপে উপস্থিত ৪৩৬টি অটোটেম্পুর মধ্যে সঠিক ২১৩টি, চেসিস অস্পষ্ট-১৯৭টি, চেসিস খোদাইকৃত ২৬টি।
এছাড়াও কমিটির গত ২০২২ সালের ২৩ মে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনয়নের লক্ষ্যে বিদ্যমান রুটসমূহের সিলিং ও স্টপেজ নির্ধারণ, রুট সংশোধন, নতুন রুট অনুমোদন ও কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের (ট্রাফিক) নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি একাধিক সভা করে জরিপ কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনাপূর্বক গত বছরের (২০২৩) ১৪ আগস্ট বিদ্যমান রুটসমূহের সিলিং ও স্টপেজ নির্ধারণ, রুট সংশোধন, নতুন রুট অনুমোদন ও কোম্পানিভিত্তিক গণপরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। নগরীর বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে অবস্থান করে দেখা গেছে, জরিপ থেকে বাদ পড়া বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার ও অটোটেম্পুসমূহ আগের মত বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। অথচ ট্রাফিক পুলিশ কিংবা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথারিটি (বিআরটিএ) দেখেও কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা পূর্বদেশ প্রতিবেদনেও দেখেছি, প্রতিবেদক সংশ্লিষ্টদের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা দাযসারা বক্তব্য দিয়ে মূল বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা মনে করি, একটি নিরাপদ ও আধুনিক নগরীর অনেকগুলোর বৈশিষ্ট্যের একটি সড়ক ও পরিবহন। পরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃৃক্সক্ষলা রোধ করতে হলে লক্কর-ঝক্কর গাড়িগুলোকে সড়ক থেকে সরানোর কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে।