নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরের লালখান বাজার থেকে ওয়াসা মোড় হয়ে জিইসিমুখী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণ কাজ চলমান। কয়েক মাস ধরেই রাস্তার একপাশের বেশিরভাগ জায়গা দখলে নিয়ে চলছে এ নির্মাণ কাজ। এতে সড়কটিতে নিয়মিত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণ বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে তারা। তার আগে বুধবারও কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ।
এ বিষয়ে সিডিএ‘র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, বাওয়া স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে মিটিং করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের দাবি দাওয়াগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। র্যাম্পের সিদ্ধান্ত সরকার নিবে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্তগুলো আসবে সেগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র্যাম্প হবে ২০/২২ ফুট উপরে। সেখান থেকে ইভটিজিং বা এ জাতীয় কিছু হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তারপরও যদি এমন কোনো পরিস্থিতির সম্ভাবনা থাকে, তাহলে আমরা সেখানে নেট দিয়ে দিতে পারি। আলোচনার মাধ্যমে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাওয়া স্কুলের সামনে সড়কের দুই পাশ অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে ‘জিইসি-ওয়াসার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকা বন্ধ করুন’, ‘ভিআইপি উড়াল সেতুতে, আমরা কেন চিপা গলিতে’, ‘এক দফা এক দাবি, র্যাম্প নির্মাণ বন্ধ করুন’ লেখা বিভিন্ন প্লাকার্ড দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে লালখান বাজার, টাইগারপাস, জিইসি দুই নম্বরগেইটসহ আশেপাশের এলাকায় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে র্যাম্পের কাজ চলমান আছে। সড়কের উপর কাঁদায় ভরে গেছে। ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে, এতে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া নিয়মিত স্কুলের সামনে যানজট দেখা দিচ্ছে। মূল সড়কের দুই-তৃতীয়াংশই ছোট হয়ে গেছে। এভাবে কাজ চললে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ঘাটতি দেখা যাবে। স্কুলের সামনে র্যাম্প নামলে এখানে যানজট আরো তীব্র হবে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন শিক্ষকরাও। তারা বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেষ পয়েন্ট হচ্ছে লালখান বাজার। কিন্তু এটি ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহারের জন্য পেনিনসুলা হোটেল পর্যন্ত নিয়ে আসা হচ্ছে। আর লালখানবাজার থেকে পেনিনসুলা হোটেল পর্যন্ত খুবই স্বল্প দূরত্ব। এত কম দূরত্বে তো দু-দুইটা র্যাম্প দরকার নেই। আর স্কুল ছুটি শেষে বাচ্চারা প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়ছে এবং তাদের সময় নষ্ট হচ্ছে।
বাওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহ. আরিফ উল হাছান চৌধুরী বলেন, আমরা গত মে মাসে নির্মাণকাজ বন্ধ ও বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিডিএ চেয়ারম্যান বরাবরে একটা চিঠি দিয়েছিলাম। এরপরেও কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ চলমান রেখেছে। প্রতিদিন আমাদের ও সিএমপি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী এই সড়ক হয়ে যাতায়াত করে। ফলে ক্লাস শুরুর আগে ও পরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। র্যাম্প নির্মাণ করা হলে যানজট চিরস্থায়ী রূপ নিবে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মাহাফুজুর রহমান বুধবার জানিয়েছেন, র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু করার আগে নগরের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতামত নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছিল। বর্তমানে যেসব কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে তার প্রধান কারণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নির্মাণসামগ্রী। আজ (বুধবার) রাতের মধ্যে বাওয়া স্কুলের সামনের অংশের কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমে যাবে।