রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে প্রয়োজনীয় সব কিছু করার অঙ্গীকার করেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। গতকাল শুক্রবার আজারবাইজানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজের করণীয় সম্পর্কে এ কথা বলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ১৮তম জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন-ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে আজারবাইজান সফরে রয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাকু কংগ্রেস সেন্টারে বৈঠকে বসেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বৈঠকের বিষয়ে ব্রিফ করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান বিষয়ে মাহাথির বলেছেন, উনি (মাহাথির মোহাম্মদ) এবং আসিয়ান সদস্যরা যেটা করা প্রয়োজন তিনি সেটা করে যাবেন। তিনি (মাহাথির) দৃঢ়ভাবে এটা অনুভব করে যে গণহত্যা, ওখানে গণহত্যা হয়েছে এবং এর বিচার হওয়া দরকার।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বলেছেন- রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নির্যাতন হয়েছে। সুতরাং, মালয়েশিয়ার একটি ফিল্ড হসপিটাল রয়েছে, কক্সবাজারে ওটার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকবে। শহীদুল হক বলেন, মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ভাসানচরের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাসানচরে নিরাপত্তাসহ অন্য দিক তুলে ধরেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও ব্যাখ্যা করেছেন শেখ হাসিনা।
দুই দেশের বিনিয়োগ বিষয়ে মাহাথিরের বক্তব্য প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার যে বিনিয়োগ রয়েছে তা আরও বাড়ানোর কথা বলেন মাহাথির মোহাম্মদ।দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক গভীর- এ বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। শহীদুল হক বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিক নিরাপত্তাসহ অন্য সুযোগ-সুবিধা এবং বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী যাতে মালেশিয়ায় যায় সে বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন মাহাথির।
ন্যাম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী :
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) ১৮তম শীর্ষ সম্মেলন আজারবাইজানের বাকুতে শুরু হয়েছে। ১২০টি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে দুই দিনের এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালে শুরু হওয়া সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্য রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থল বাকু কংগ্রেস সেন্টারে উপস্থিত হন। এসময় তাকে অভ্যর্থনা জানান আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট। ন্যাম বিশ্বের ১২০টি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি ফোরাম, যা বড় কোনও পাওয়ার ব্লকের সঙ্গে বা বিপক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত নয়। জাতিসংঘের পর এটি বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রগুলোর বৃহত্তম গ্রুপিং।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু ও সাবেক যুগোস্নোভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেপ ব্রোজ টিটোর উদ্যোগে ১৯৫৫ সালে বান্দুং সম্মেলনে সম্মত নীতিমালা প্রণয়নের পর ১৯৬১ সালে যুগোস্নোভিয়া বেলগ্রেডে ন্যামটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ন্যাম সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্ব নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি, কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ, জিবুতির প্রেসিডেন্ট ইসমাইল ওমর, ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আদ্দো, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি, ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি এম. ভেঙ্কাইয়া নাইডু, তুর্কমেনিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুর্বাঙ্গুলি বার্ডিমুহামেডো, বসনিয়া হার্জেগভিনার চেয়ারম্যান বাকির ইজেতগোভিচ, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি, লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ মুস্তাফা আল-সারাজ।
ন্যামের বর্তমান চেয়ারপারসন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণ দেন। তার ভাষণের পর আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আগামী তিন বছরের জন্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর বান্দুং নীতির ভিত্তিতে ন্যামকে গড়ে তোলার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন ইলহাম।
জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনের সভাপতি তিজানি মোহাম্মদ-বান্দে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০১৬ সালের ন্যাম সম্মেলনের পর ফোরামভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রের প্রয়াত নেতাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রের লাঞ্চ হলে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে প্রতিনিধিদলের প্রধানদের জন্য দেওয়া ওয়ার্কিং লাঞ্চন-এ যোগ দেবেন। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হায়দার আলিয়েভ সেন্টারে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনায় অংশ নেবেন।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, প্রতিনিধিদলের প্রধানদের সঙ্গে ওয়ার্কিং লাঞ্চ ও সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। তিনি হিলটন বাকুতে একইসঙ্গে আজারবাইজানের দূত হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত তুরস্কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ন্যাম সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে যোগদানে চার দিনের সরকারি সফরে বৃহস্পতিবার রাতে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট স্থানীয় সময় রাত ৯টা ১০ মিনিটে বাকু হায়দার আলিয়েভ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণ করে। পরে প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রাসহকারে বাকুর হোটেল হিল্টনে নিয়ে যাওয়া হয়। আজারবাইজান সফরকালে তিনি এখানেই অবস্থান করবেন।