উখিয়া প্রতিনিধি
বিশ্ব শরণার্থী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কক্সবাজারের সার্কিট হাউস রোডে অবস্থিত অরুণোদয় স্কুলের অডিটোরিয়ামে “বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ভবিষ্যৎ ও চ্যালেঞ্জসমূহ” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০ জুন সকাল ১১টায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
কোস্ট ফাউন্ডেশন আযোজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (যুগ্ম সচিব) মোঃ শামসুদ দৌজা, বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন কক্সবাজারের ডিআইজি প্রলয় চিসিম, দাতা সংস্থা পক্ষে মারকো মিলজেভিক।
উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর নূর আহমেদ আনোয়ারী, হেল্প কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম, নুরুল ইসলাম, এড. সাকি এ কাউসার, সাংবাদিক তৌহিদ বেলাল, উখিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, মকবুল আহমেদ, নুরুল ইসলাম, উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিক আজাদ, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী, উপজেলার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, এনজিও প্ল্যাটফর্মের এক্সেস কো- অর্ডিনেটর মারকো মিলজেভিক এবং বিভিন্ন এনজিও-এর প্রতিনিধিগণ। এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ এবং স্থানীয় যুব প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। কোস্ট ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
মোঃ শামসুদ দৌজা বলেন, একদিকে রোহিঙ্গাদের তহবিল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে অস্থিরতা বিরাজ করায় এ মুহূর্তে প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়, আমরা চাই মিয়ানমার পরিস্থিতি দ্রæতই স্থিতিশীল হবে এবং প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রলয় চিসিম বলেন, যেহেতু রোহিঙ্গারা আমাদের পাশে অবস্থান করছে সুতরাং তাদের অবস্থাও আমাদের চিন্তা করতে হবে এবং সামাজিক স¤প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার ক্যাম্প এবং ক্যাম্প অধ্যুষিত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে, কিন্তু শুধুমাত্র আমাদের পক্ষে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সকলের অংশগ্রহণ খুবই প্রয়োজন।
মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন নতুন করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, আমাদের উচিত অন্যান্য রাষ্ট্রে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, এতে করে রোহিঙ্গারা যেমন উপকৃত হবে সেই সাথে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে।
নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, আমাদের উচিত ক্যাম্প ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তা এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে প্রতিমাসে অন্তত একটি করে সমন্বয় সভা করা, যাতে করে সমস্যাসমূহ দ্রæত চিহ্নিত করা যায় এবং বাস্তবায়ন করা যায়। নুরুল ইসলাম বলেন, পরবর্তী অবস্থা কি হবে তার জন্য অপেক্ষা না করে আমাদের উচিত এখনই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
মকবুল আহমেদ বলেন, সংকট মোকাবেলায় এখন যদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে একটা সময় আমরাও উদ্বাস্তু হয়ে যেতে পারি, আমরা যেমন তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হব, তাদেরকেও স্থানীয়দের প্রতি সহানুভ‚তি ও মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে।
শাহাদাত হোসেন বলেন, তহবিল হ্রাস হচ্ছে ও রোহিঙ্গা শিবিরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াসহ ইতিমধ্যে আমরা অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি এবং আগামীতে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে সেই বিষয়েও ধারণা করতে পারছি, তাই এখন সময় হল একটি সুন্দর অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা এবং এ অনুসারে কাজ করা।
পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন আর শুধু মানবিক নয়- এটি একটি অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং ক‚টনৈতিক চ্যালেঞ্জ।
আলোচনা সভায় আরো গুরুত্ব পায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ক্যাম্প সম্প্রসারণ না করে পুনর্বাসন ও জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করা প্রয়োজন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও রোহিঙ্গা নেতাদের মধ্যে নিয়মিত সমন্বয় ও কমিউনিটি পুলিশিং চালু করা। ভাসানচরে অবস্থান নিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্বেগ দূর করতে পরিবেশ উন্নয়ন ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থা প্রয়োজন।