গত বৃহস্পতিবার বিকালে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চারদিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। এ সম্পাদকীয় স্তবক যখন লেখা হচ্ছে তখন তিনি প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূসসহ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করছেন। বিভিন্ন অনলাইন, টেলিভিশন ও স্যোসাল মিডিয়াগুলো মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টার সফরকে লাইভ সম্প্রচার ও নিউজ আপডেট দিচ্ছিলেন। বলাবাহুল্য এবারের সফরের আগে তিনি ২০১৮ সালে আরো একবার বাংলাদেশ সফর করেন। বাংলাদেশ সফরের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাস্প পরিদর্শন ও তাদের অবস্থাদি সম্পর্কে সম্যক অবগত হওয়া। জাতিসংঘের মহাসচিব অবশ্যই নিজেই বলেছেন, প্রতি বছর রমজানে তিনি সংকটাপন্ন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে সফল করেন এবং অভিভাসী বা আশ্রিতদের সাথে ইফতার করেন। মূলত অভিবাসী বা নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য তার এ সফর। আমরা জাতিসংঘের এ সফরকে স্বাগত জানাই। বিশেষ করে বিশ্বের দুই শতাধিক রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতিসংঘের মহাসচিব যখন আমাদের দেশে আসেন তখন আমরা আশায় বুক বেঁধে থাকি-এবার অন্তত রোহিঙ্গা সংকটের অবসান হবে। ২০১৮ সালে তাঁর আগমনকে কেন্দ্র করে আমরা সম্পাদকীয়তে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম। কিন্তু ছয় বছর পর তিনি আবারও আসলেন আবারও ইফতার করলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সংকটের কোন সুরহা হয়নি। বরং মিয়ানমারে এখন যে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সাথে দেশটির জান্তা সরকারের যে যুদ্ধাবস্থা তাতে এ সংকট আদৌ নিরসন হবে কিনা, হলে কখন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে। এরপরও আমরা আশাবাদী, বাংলাদেশ এখন একজন বিশ্বখ্যাত নোবেল বিজয়ির হাতে। যার সাথে বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সখ্যতা রয়েছে। তিনিই আন্তরিকতা ও সর্বোচ্চ ক‚টনৈতিক তৎপরতায় রোহিঙ্গরা তাদের নিজ দেশ ও রাজ্যে ফিরে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে মিয়ানমার সরকার তাদের সামরিক বাহিনীকে দিয়ে রাখাইনে এক জাতিগত ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে। এতে প্রাণে রক্ষায় প্রায় ৫লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাঙলাদেশে আশ্রয় নেয় এর আগে আরো প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে এখানে আশ্রয় নেয়। ৫৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের জনবহুল অথচ ছোট্ট এ বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া অসম্ভব বিষয়। এরপরও সরকার ও জনগণের মানবিকতা তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে, কিন্তু বছরের পর বছর তারা এদেশে বসবাস করবে, তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জাতিসংঘের মহাসচিব এ বিষযটি নিশ্চয়ই অনুধাবন করবেন। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন -এ প্রত্যাশা আমাদের।