নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরী ও জেলার বিভিন্ন থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ ইন্সপেক্টর মো. নেজাম উদ্দিন রোষের শিকার হয়েছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় একটি স্কুল থেকে ছেলেকে আনতে গিয়ে তিনি বিক্ষুব্ধ কয়েকজনের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। তাকে মারধর করে কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অদূরে একটি বেসরকারি স্কুল থেকে ছেলেকে আনতে গিয়ে তিনি আক্রান্ত হন। কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে মারধর ও শার্টের কলার ধওে টানতে থাকে। এসময় লাঞ্ছনাকারীদের সঙ্গে থাকা চকবাজার থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব শহিদুল ইসলাম শহিদের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে ঘটনাটি লাইভ প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, নীল শার্ট পরিহিত ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন। তাকে সিঁড়িতে ফেলে কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে গলা টিপে ধরতে দেখা যায়। ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায়, এই সেই ওসি নেজাম। যে জনতার মেয়র ডা. শাহাদাতকে, আমাদেরকে ১৫ বছর কষ্ট দিয়েছে। আজকে তাকে আমরা ধরেছি। পাঁচলাইশ থানার সামনে আমাদের দলীয় লোকজনকে জড়ো হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। এসময় পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম বারবার অনুরোধ করতে থাকেন, সবার সামনে তাকে যেন লাঞ্ছিত না করা হয়। পরে পুলিশের একটি দল এসে তাকে পাঁচলাইশ থানায় নিয়ে যায়।
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজ্জাদ হোসেন জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওনাকে আমাদের হেফাজতে নিয়েছি। তিনি পাঁচলাইশ এলাকার একটি স্কুল থেকে ছেলেকে নিয়ে আসার সময় এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে লাঞ্ছনার দৃশ্য প্রচার করা চকবাজার থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব শহিদুল ইসলাম শহিদকে কল দিলে রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তিনি ঝামেলায় আছেন বলে কল কেটে দেন।
জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু বলেন, আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। দেশে সরকার আছে, আইন আছে। আমাদের কাউকে তো মানুষ ধরে থানায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ঘটনাটি দলীয়ভাবে তদন্ত করা হবে। যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, নেজাম উদ্দীনকে আমাদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।
মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীনকে আটক হওয়ার পর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে থানায় মানুষের ভিড় করতে শুরু করে। থানার সামনে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা নেজামের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকে। নেজামের নির্যাতনের শিকার একাধিক মানুষও ভিড় করছে। নেজাম উদ্দিন সর্বশেষ সিআইডি কুমিল্লাতে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে নগরের কোতোয়ালী, বাকলিয়া, সদরঘাট থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এদিকে মারধরের শিকার হয়ে ওসি নেজাম উদ্দীন এখন দামপাড়া পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। অন্যদিকে, ‘ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে তাকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা- এটিও ওসি নেজামের বিষয়। তিনি অভিযোগ দিলে পুলিশ বিষয়টি দেখবে বলে জানান পুলিশের ডিসি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মুহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত আছে। বিক্ষুব্ধরা থানা প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তা নেজাম উদ্দিন বর্তমানে দামপাড়া পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
ওই পুলিশ কর্মকর্তা মারধরের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি আমরা এখনই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আমরা আলাপ করবো এ বিষয়ে। উনি এখন চিকিৎসাধীন যেহেতু আছেন, সুস্থ হলে অভিযোগ দিলে তারপর দেখা যাবে।’
বিক্ষুব্ধদের গ্রেপ্তার দেখানোর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা কিভাবে দেখাবো? একটা নালিশি মামলায় (সিআর) কি গ্রেপ্তার দেখানো যায়? তিনি যে মামলার আসামি মামলাটি আদালতে হয়েছে এবং তদন্তাধীন বিষয়।