আ.জ.ম. সামশুল হক
রমজান মাস আমাদের জীবনে বরকতময় এবং আত্মশুদ্ধির মাস। রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। শরিয়তের বিধান মতে, রোজা পালন করতে হয়। রোজা রাখার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সময়ে সাহরি এবং ইফতার করা উত্তম। সুবেহ সাদিকের পূর্বে সাহরি এবং সূর্যাস্তের পর দ্রুত ইফতার করা বাঞ্চনীয়। রোজা পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই খোদাভীতি থাকতে হবে। রোজা পালনের মাধ্যমে তাকওয়া ও পরহেজগারি অর্জিত হয়। কোরআনুল করিমে আল্লাহ নিজেই নির্দেশ দিয়েছেন, ‘রোজা তোমাদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। যেমনি পূর্ববর্তীদের জন্য ও ফরজ করা হয়েছিল’। ইসলামে পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা অন্যতম। রোজার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ‘আল্লাহ নিজেই বিনিময় দান করবেন।’ মহান রাব্বুল আলামিনের নির্দেশিত পথে ঈমান- আমলের সাথে যারা রোজা রাখে, তাদের অতীত জীবনের সমস্ত গুনা মাফ হয়ে যায়। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে, রমজান মাসে যারা নফল ইবাদত করবে, তারা অন্য মাসের ফরজ সমতুল্য বিনিময় পাবেএবং ফরজ কাজে অন্য মাসের সত্তর গুণ ফরজ সমতুল্য পাবে। উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, রমজান মাসে জান্নাতের ফটকগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের ফটকগুলো বন্ধ রাখা হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, পবিত্র রমজান মাসে যাবতীয় আমলের বিনিময় দশগুণ থেকে সত্তর গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
রোজার নিয়ত করা ফরজ। এক্ষেত্রে রাতে নিয়ত করা শ্রেয়। প্রত্যেক রোজার জন্য আলাদাভাবে নিয়ত করা উত্তম। সাহরি খাওয়া সুন্নত। শুধু পানি পান করেও সাহরির সুন্নত আদায় হবে।
ইফতার সামগ্রী নিয়ে আগেভাগে বসা সুন্নত ও ইবাদত। ইফতারের গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারদের জন্য দুটি আনন্দ। একটি ইফতারের সময়, অন্যটি হচ্ছে, যখন সে প্রভুর সাথে সাক্ষাত করবে।’ ইফতারের সময় রোজাদারদের দোয়া কবুল হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও ফিরিয়ে দেওয়া হয়না। রোজাদারদের দোয়া (যতক্ষণ না সে ইফতার করে), ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া এবং মজলুমের দোয়া।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘ যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য সমপরিমাণ প্রতিদান দেওয়া হবে। রোজাদারের প্রতিদান থেকে কোনো প্রতিদান কমানো হবেনা। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.)বলেছেন, ‘প্রতিটি ইফতারের সময় এবং রমজান মাসের প্রতি রাতে বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
ইফতারের মাধ্যমে পারিবারিক ও সামাজিক সম্প্রীতি মজবুত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। শুধু একটি খেজুর এবং পানি দিয়ে ইফতার করালে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাকেও বিনিময় দিবেন। আল্লাহ’র অফুরন্ত ভান্ডারে কোন ঘাটতি হবেনা। অসুস্থতাজনিত কারণে কেউ রোজা না রাখতে পারলে অবশ্যই পরবর্তীতে রোজা আদায় করা আবশ্যক। মহিলাদের মাসিক পিরিয়ড এবং প্রসবকালীন সময়ে রোজা রাখা নিষেধ। তবে কাযা রোজা অবশ্যই আদায়যোগ্য। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ রোজা ভঙ্গ করলে রোজার কাযা এবং কাফফারা দু’টিই আদায়যোগ্য হবে। রোজার বিধি-বিধান মতে, ফরজ রোজা মাফের কোন সুযোগ নাই। পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে এবং মুফতি-আলেমদের বর্ণনামতে, সুবেহ সাদিকের পরে পানাহার করলে এবং সূর্যাস্তের আগে বা ইফতারের সময় হয়েছে মর্মে ইফতার করলে উক্ত রোজার কাযা করতে হবে। বমি নির্গত হলে রোজা ভাঙবে না, তবে বমি গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে। রোজা থাকাকালীন যে কোন ইঞ্জেকশন শরীরে পুষ করা, ইনসুলিন গ্রহণ করা, স্যালাইন গ্রহণ করা, সাপোজিটর ব্যবহার করা, চোখে-কানে ড্রপ দেওয়া, ইনহেলার গ্রহণ করা, রক্ত দেওয়া- নেওয়া এবং অক্সিজেন ব্যবহার করার কারণে রোজা ভঙ্গ হবেনা।
রমজান মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। এই মাসে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে পবিত্র কোরআন শরীফ দুনিয়াতে নাজিল হয়েছিল। ঐ কোরআন শরীফের বদৌলতে আমরা ইহকাল এবং পরকালের দিকনির্দেশনা পেয়েছি। আমাদের জীবন ও চরিত্র গঠনে কোরআনুল করিম আমাদের জন্য নেয়ামক শক্তি। তা ছাড়া রোজার মধ্যে আমরা এক মহিমান্বিত রাত পেয়েছি। যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। লাইলাতুলকদর মুসলিম উম্মাহ র জীবনে প্রতি বছর ঘুরে আসে। সেই রাত আমাদের মুক্তির বার্তা দেয়। আল্লাহকে খুব কাছে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ধার্মিক মুসলমানেরা ঐ রাতে প্রাপ্তির আশায় সারা রাত-দিন ইবাদতে মশগুল থাকে।
রোজার মধ্যে বেশি বেশি সালাত আদায় করা, নফল আমল করা, কোরআন তেলওয়াত করা, দোয়া পাঠ করা, জিকির করা, দান – সদকা করা, বিশেষ করে যাকাত আদায় করার মধ্যে বেশি ফজিলত। আমরা মুসলমান এবং আল্লাহর বান্দা- রাসুলের উম্মত হিসেবে বছরের বার মাসের মধ্যে রমজান মাসকে আঁকড়ে ধরার জন্য কোরআনুল করিম এবং সুন্নাহ আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। পরকালের জীবন সুখময় করার ক্ষেত্রে আমাদের উজ্জীবিত করে।
লেখক : কলামিস্ট