রাহুল দাশ নয়ন
কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সরকার পতন হয়েছে। আন্দোলনকালীন এ সময়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে রেল। গত ২১ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় পরিবহন খাতে প্রায় ৬৩ কোটি টাকা আয় হারিয়েছে পূর্বাঞ্চল। গত ১৮ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। প্রায় ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর ১ আগস্ট স্বল্প দূরত্বের দুটি ট্রেন চলাচল করলেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় তা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও আন্দোলন সহিংসতার কোচে আগুন দেয়া, যাত্রা বাতিল ও স্টেশন ভাঙচুরের কারনে প্রায় ২২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ২১ দিনে পূর্বাঞ্চল রেলের ক্ষতি হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ১৮ জুলাই থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও রেল ভবনের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা পেলেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন গড়ে তিন কোটি টাকা আয় কমেছে।’
সরেজমিনে রেল স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় চিরচেনা রেল স্টেশনের দৃশ্যপট পাল্টেছে। ট্রেন চলাচলকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন যে স্টেশনে যাত্রীদের প্রাণচাঞ্চল্য থাকে সেখানে এখন পিনপতন নীরবতা। স্টেশনের নিরাপত্তায় থাকা জিআরপি ও আরএনবির কয়েকজন সদস্য ছাড়া মানুষের আনাগোনা নেই। কাউন্টারের সামনে টিকিট কেনার ভিড় নেই। যাত্রীদের লাগেজ আনা-নেয়ায় ব্যস্ত থাকা ট্রলিম্যানরা কাজ না থাকায় অলস বসে আছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি উত্তোরণ হওয়ায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাইফুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘রেল চালাতে আমরা পুরোদমে প্রস্তুত আছি। ঢাকা থেকে নির্দেশনা পেলেই পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আট ঘণ্টা সময় দিলেই ট্রেন চলাচল হবে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন চট্টগ্রাম বিভাগেই ৮০ লক্ষ টাকা আয় কমেছে।’
এদিকে রেল চলাচল বন্ধ থাকায় আয় কমার পাশাপাশি সহিংসতায় পূর্বরেলের প্রায় ২২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনে দপ্তর প্রধানদের নিয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের ৭টি, জামালপুর এক্সপ্রেসের ৬টি, চট্টলা এক্সপ্রেসের ১৩টি, পারাবত এক্সপ্রেসের ৮টি ও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের ২টি বগি ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের চারটি বগি পুরোপুরি পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং তিনটি ট্রেনের ইঞ্জিন ভাঙচুর করা হয়। দুস্কৃতিকারীরা তিনটি স্টেশন ভাঙচুর, রেলওয়ের সংকেত ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি নষ্ট ও রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত অগ্রিম সংগ্রহ করা টিকিট বাবদ ফেরত দিতে হবে ১৬ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগের যাত্রীদের ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের যাত্রীদের ৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী সুশীল কুমার হালদার বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই সময়ে রেলের প্রায় ২২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বড় একটি অংশই ট্রেনের যাত্রা বাতিল হওয়ায় যাত্রীদের ফেরত বাবদ ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ৪০টি কোচ ও স্টেশন ভাঙচুর করার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেল।’