নিজস্ব প্রতিবেদক
রেল লাইন নির্মাণ, নতুন ট্রেন চালু ও রুট বাড়ানোর নামে হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে সরকার। এতে দৃশ্যমান উন্নয়ন হলেও রেল সেবা বাড়েনি। উল্টো দিনের পর দিন রেল সেবা তলানিতে যাচ্ছে। গত বছরের এদিনে সর্বশেষ যাত্রীবাহী ট্রেনের রেয়াত-সুবিধা (ছাড়) প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে যাত্রীরা যাত্রাপথে গত এক বছর ধরে বাড়তি ভাড়া পরিশোধ করলেও সেবার মান আগের চেয়ে কমেছে। সেবার মান নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীরা ক্ষোভ ঝারলেও তা রেল কর্মকর্তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। অথচ নতুন ট্রেন, নতুন রুট ও
গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী সাহাব উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘ট্রেনের উঠার পর যে বগিতে উঠি সেটির মেঝেটি ছিল অপরিষ্কার। বাদামের খোসা, চিপসের প্যাকেট ফেলেছে যাত্রীরা। কিছু অসচেতন যাত্রীর দ্বারা এমন কাÐ ঘটলেও এগুলো রেল পরিচালনায় দায়িত্বে থাকাদের পরিষ্কার করা উচিত ছিল। বগিতে সিটগুলোও ছিল ছেঁড়া। যা দেখে বগি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রেল কর্মচারীকে অবগত করেছি। তবে অবস্থা বুঝে মনে হয়েছে তাদের কিছু করার নেই। অথচ রেলের বিভিন্ন সভায় আমরা রেল সেবার মান উন্নোয়নের গল্প শুনি।’
গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় বাচ্চাদের একটি দুর্গন্ধজনিত ডায়াপার দেখা যায়। এসময় যাত্রীরা দুর্গন্ধের কারনে পরিবার-পরিজন নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে। পরে রেল কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হলে ডায়াপারটি সরিয়ে নেয়া হয়। এই ট্রেনের যাত্রী শাহদাত বলেন, ট্রেন ছাড়ার আগে নিয়মানুযায়ী সকল বগি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হয়। এজন্য যাত্রীবাহী ট্রেন মনিটরিং ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিল দেয়া হয়। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণেই যাত্রীদের এমন বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলের জন্য দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল তৈরি করে রেল সেবার পরিমাণ ও গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে এক বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় শূন্য পদে নিয়োগ, রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি, ওয়ার্কশপ ট্রেনিং ইউনিটগুলো আধুনিকায়নের পাশাপাশি দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ, কারিকুলাম হালনাগাদ করার হবে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই যাতে এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয় সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমে বলেন, ‘রেলের এক টাকা আয়ে খরচ হচ্ছে আড়াই টাকা। অপচয় ও দুর্নীতি কমানো গেলেই সেবা বাড়ানো সম্ভব হবে। খরচ যাতে দুই টাকার নিচে নামানো হয় সেজন্য কর্মকর্তাদের বলেছি। রেলওয়ের সেবার মান অনেক কম। লোকসান বেড়ে গেলে রেল সেবা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। রেলের অপচয় ও দুর্নীতি কমাতে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
ভাড়া বাড়ানোর এক বছর : যাত্রীবাহী ট্রেনের রেয়াত-সুবিধা (ছাড়) প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর গত বছরের ৪মে থেকে ট্রেন ভাড়া বেড়ে যায়। যাত্রীবাহী আন্তনগর, মেইল, লোকাল ও কমিউটার-সব ধরনের ট্রেনের ভাড়া বাড়ে। তবে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভ্রমণের ক্ষেত্রে ভাড়া অপরিবর্তিত থাকে। সেসময় প্রতিটি রুট ভেদে ৭-৯ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি পায়।
সেসময় রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছিল, রেলের লোকসান কমানোর লক্ষ্যেই রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যথায় সেবার মান উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে রেল। এই সুবিধা প্রত্যাহারের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। রেয়াতি সুবিধা বাতিল করায় রেলওয়ে বছরে ৩০০ কোটি টাকা বাড়তি আয় করতে পারবে বলে জানানো হয়।
রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে ভাড়া বর্ধিত করা হলেও প্রকৃতপক্ষে উল্টো চিত্র দেখা যায় রেলে। আয় বাড়ানোর পরিবর্তে এখনো ব্যয় বাড়ানোতেই যেন আগ্রহ বেশি রেল কর্মকর্তাদের। এখনো প্রকল্প গ্রহণ, অপচয় ও দুর্নীতিতে ডুবে আছে রেল কর্তারা। গত এক বছরে ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করা হলেও সেবার মানে যেন কারও নজর নেই। নতুন সরকার রেল সেবা বাড়াতে বারবার তাগাদা দিলেও সেবা বাড়েনি। নানা অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি ঝুঁকলেও এক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নেই বেগ পেতে হচ্ছে রেল কর্মকর্তাদের। অথচ সেবা মান বাড়ানোর নামেই বছরে কোটি কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে।