নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতি দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় সাফ চ্যাস্পিয়নশিপ। মর্যাদাপূর্ণ এই ফুটবল আসরের টানা দুইবারের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। ২০২২, ২০২৪ এর সফলতায় ২০২৬ রাঙিয়ে হ্যাটট্রিক স্বপ্ন দেখার এইতো সুযোগ। কিন্তু যে তারাদের হাত ধরে দুইটি শিরোপা সেই তারাদের হাতে হ্যাটট্রিক শিরোপা ধরা দিবে তো? নাকি তার আগেই খসে পড়বেন রুপনা, ঋতুপর্না ও মনিকারা। যেভাবে খসে পড়েছেন ২০২২ এ শিরোপা জয়ী আনুচিং, আনাই মগিনী। নাকি এই পাঁচজনের মতো আগামিতে বাংলার ফুটবল টিমে দ্রæতি ছড়াবেন পাহাড়ের অন্য নারীরা?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলা দলে রুপনা, ঋতুপর্না, মনিকা, আনাই, আনুচিংদের পদাঙ্ক অনুসরণে ঘাম ঝরাচ্ছেন একদল সম্ভাবনাময় নারী। বিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি আবাসিক হোস্টেলে থেকে কোচ শান্তি মনির ফুটবল দীক্ষায় দিক্ষিত হচ্ছেন মাশাও মারমা, নবনিতার মতো উঠতি ৩২ নারী। যারা আগামিতে জাতীয় দলে ঠাঁই পেতে প্রাণান্তর চেষ্টা করছেন। যদিও রাঙামাটির কাউখালীর ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ফুটবল উন্মাদনা দিনদিন কমছে। পাহাড়ের ফুটবল সূতিকাগারখ্যাত ঘাগড়ার যে জৌলুস তা কিছুটা ¤øান। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে শিক্ষক বীরসেন চাকমা, কোচ শান্তি মনি চাকমা ও সুইলা মারমারা পাহাড়ে নারী ফুটবল জাগরনের যে স্বপ্ন দেখেছেন তা বিফলে যাওয়ার শঙ্কা জেগেছে। অবসরের পর ঋতুপর্নাদের শিক্ষক বীরসেন চাকমা এখন ব্যস্ত কৃষি খামার নিয়ে।
২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বীরসেন ও শান্তিমুনিকেও রাঙামাটিতে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এবার ঋতুপর্না, মনিকা ও রূপনাদের গড়ে তোলার কারিগরদের খোঁজ কেউ নিবে কিনা এমন শঙ্কাও জেগেছে।
কাউখালির ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় ফুটবল টিমের প্রশিক্ষক শান্তিমুনি চাকমা পূর্বদেশকে বলেন, ‘ঘাগড়া স্কুলের খেলোয়াড়রা সারাদেশে সুনাম রক্ষা করছে এটি আমার জন্য বড় পাওয়া। অনেকেই ঝরে পড়েছেন, অনেকেই টিকে আছে। এখনো ৩২ জন শিক্ষার্থী স্কুল হোস্টেলে থেকে নিয়মিত প্র্যাকটিস করে। এরাও আগামিতে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছে। স্কুলের ৪/৫ জন খেলোয়াড় অনেক সম্ভাবনাময়। স্কুল বন্ধের দিন সকাল-বিকাল, খোলার দিন বিকালে নিয়মিত প্র্যাকটিস করে নিজেদের তৈরি করছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা, মাঠের অবস্থা খুব খারাপ, বৃষ্টি হলেই মাঠে পানি জমে থাকে। এরপরেও এই নারীরা স্বপ্ন দেখছে’।
একটা সময় পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে এনে মনিকাদের মতো খেলোয়াড় তৈরি করেছেন তারা। এর মধ্যে জাতীয় দলে খেলা আনাই মগিনি ও আনুচিং মগিনির বাড়ি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার সাত ভাইয়ের গ্রামে। মনিকা চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি গ্রামে। ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মঘাছড়ি গ্রামে। আর রুপনা চাকমার বাড়ি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভুঁইয়োছড়ি গ্রামে। ২০২২ সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় আনাই, আনুচিং হারিয়ে গেছে। বাদ পড়ে অভিমানে আনুচিং অবসরের ঘোষণা দেন।
২০১১ সালে বঙ্গমাতায় যে টিম মঘাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে খেলেছিল সেই টিমের কেউ এখন জাতীয় দলে নেই। সেই দলের খেলোয়াড় তিশা চাকমা, পিয়ারি তংচঙ্গ্যা, রুনা তংচঙ্গ্যা, আয়না চাকমা, নদী চাকমা, সিবলিকা তালুকদার, শিল্পা চাকমা, মাউচাই মারমা, চাথুইমা মারমা, রনি চাকমা, নিংচানা মারমা, উনুচিং মারমা, মুনা মারমা, উইনুচিং মারমা, হ্লানুমা মারমা, চম্পা মারমা, রুমা আক্তার। এদের কেউ কেউ বয়সভিত্তিক দলে খেলার সুযোগ পেলেও জাতীয় দলে সুযোগ পায়নি। মূলত পরেরবার যে টিম বঙ্গমাতা টুর্নামেন্টে রানারআপ হয়েছিল সেই টিমেই ছিল আনুচিং, আনাই, মনিকা, ঋতুপর্না ও রূপনা।
এখন ঘাগড়া স্কুলের প্রশিক্ষক শান্তিমনির অধীনে ৩২ জন নারী নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন। এরমধ্যে মাশাও মারমা ও নবনিতার মতো মেয়েরা স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় দলে খেলার। তবে বেশিরভাগ খেলোয়াড় এখনো বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ না পাওয়ায় আদৌ জাতীয় দলে টিকবে কিনা সে শঙ্কা জেগেছে। তবুও হাল না ছেড়ে প্র্যাকটিসে মনোযোগী পাহাড়ের নারীরা। তাদের স্বপ্নও মনিকা, ঋতুপর্নাদের মতো আগামির সাফের অংশীদার হওয়া।