রাহাত হত্যা : যে হত্যা মেনে নেয়া যায়না

1

রতন কুমার তুরী

নগরীর পুরান চাদগাঁও থানাস্থ সানোয়ারা ইসলাম বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণি ছাত্র রাহাত সাম্প্রতিক তারই সহপাঠী দ্বারা নির্মমভাবে খুন হয়েছে। বিষয়টি চট্টগ্রামসহ সারা দেশে তোলপার সৃষ্টি করেছে। বন্ধু হয়ে কীভাবে বন্ধুকে এমন নির্মমভাবে খুন করলো এ প্রশ্ন সবার মুখেমুখে। শুধুমাত্র স্কুলের প্রথম বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে ঝগড়ায় একজন ছাত্রকে বন্ধুর হাতে প্রাণ দিতে হলো এটি যেনো একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা। এ ঘটনায় প্রমাণ করে আমাদের কিশোর সমাজের মনমানসিকতা কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে ! ঘটনার দিন একজন বন্ধু টিফিন ছুটিতে খেলার নাম করে স্কুল থেকে একটু দূরে হামিদ চরে রাহাতকে নিয়ে যায়। রাহাত ছিল ক্রিকেট পাগল সে চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ইউনিয়নের খুদে ক্রিকেট দলের সদস্যও ছিল। ক্রিকেট খেলার নাম শুনে সে বন্ধুর সাথে হামিদ চরে গেলে সেখানে তিনজন মোট চারজন সহপাঠী মিলে পূর্ব ঝগড়াটির জের ধরে তাকে এলোপাতাড়িভাবে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করে মেরে পাশের কর্ণফূলি নদীতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তার লাশ একটি নালায় পাওয়া যায়।
পুলিশ অবশ্য উক্ত চারজন সন্দেহভাজন সহপাঠীকে তাদের হেফাজতে নিয়ে জিগ্যাসাবাদ করছে এবং তাদের নিকট থেকে কিছু তথ্য পেয়েছে বলে বলছে। অন্যদিকে এ ঘটনা সানোয়ারা ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক দ্বারাও একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে বলে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক প্রশাসনকে নিশ্চিত করেছেন। তারা ঘটনার দিনের সিসি টিভি পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন ঘটনা খুটিনাটি বিচার করে দেখছেন বলে জানিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো এতো কম বয়সে রাহাতের খুনিরা এমন নির্মম কীভাবে হলো ? এরা খুন করার মত এতোবড় সাহস কোথায় পেলো ? সত্যিই কী এরাই রাহাতকে খুন করেছে? নাকী এ খুনের সাথে আরো কেউ আছে ? বিষয়গুলো নিশ্চয়ই পুলিশ খতিয়ে দেখবেন। তবে রাহাতের মতো এতো ছোট ছেলে তার সহপাঠী দ্বারা খুন হবে এটা কখনও কাম্য হতে পারেনা । এতো বয়সে খুনের মনমানসিকতা নিয়ে চলাফেরা করা কিশোররা নিসন্দেহে খুবই ভয়ংকর পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যার দায় তাদের পিতা মাতার ওপরেও বর্তায়। তাদের এ কিশোর সন্তানদের নিশ্চয় তারা কোনদিনও তাদের চলাফেরা, আচার আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন নাই আর তাই তারা আজ খুনের মতো ঘটনা ঘটাতে পারলো। বিষয়টি ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। জনতা চাদগাঁও থানাসহ চট্টগ্রাম শহরে রাহাত হত্যার খুনিদের বিচার চেয়ে মিছিল করেছে। রাহাতের পরিবারের সকল সদস্য এখন পাগল প্রায়। তারা প্রশাসনের কাছে এর সর্বোচ্চ বিচার
দাবি করছে। প্রকৃতপক্ষে রাহাতের মতো এতো ছোট ছেলের একটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন হয়ে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছেনা। আসলে এটি মেনে নেয়ার কথাও নয়। কীকরে এতো ছোটছোট ছেলে রাহাতকে পিটিয়ে হত্যা করলো এ বিষয়টি মনে হলে সবার শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে। যে ছোট একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন খুনের ঘটনাটি ঘটলো সে ঘটনাটি রাহাতের মা গিয়ে মিমাংসাও করে দিয়েছিল তারপরও রাহাতকে জীবন দিতে হলো । যারা রাহাতকে খুন করলো তারা কেমন মানসিকতার কিশোর ভাবতে অবাক লাগে। তারা কী একবারও চিন্তা করলোনা একজনকে খুন করলে তাদের কী শাস্তি হতে পারে ? এমন কী এ খুনের কারনে তাদের জীবনসহ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ?
প্রকৃতপক্ষে দেশে দিনদিন কিশোর অপরাধ বাড়ছে। কিছু কিশোর দিনদিন এমন ভয়ংকর হয়ে ওঠছে তারা খুন পর্যন্ত করতে পিছপা হচ্ছেনা। রাহাত হত্যা তার একটা বড় প্রমাণ। সময় এসেছে এসব কিশোরদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দেয়ার। এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের ধরে কঠিন শাস্তি না দিলে রাহাতের মতো ছেলেদের তাদের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হবেনা। তাই রাহাতের খুনিরা কোনো কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য কীনা তা আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিশ্চিত হওয়া জরুরি। যদি হয়ে থাকে তাহলে পুরো গ্যাংকে ধরে আইনের আওতায় আনা খুবই জরুরি। আমরা রাহাতের খুনিদের সর্বোচ্চ বিচার চাই। এ বিচার দৃষ্টান্তমূলক হওয়া উচিত অন্যথায় অন্যান্য কিশোরা ভয় পাবেনা। আর যাতে রাহাতের মতো কোন স্কুল ছাত্র সহপাঠীর হাতে খুন হয়ে নালায় পড়ে না থাকে এ বিষয়ে অভিভাবকরাও যাতে সচেতন থাকে। তাদের স্কুল পড়–য়া সন্তানটি কোথায় কার সাথে মিশছে কী করছে তা যেনো খোঁজ খবর রাখে। অনেক সময় অভিভাবকদের ভুলের কারণে সন্তান খারাপ পথে চলে যায় এবং খুন রাহাজানিতে লিপ্ত হয়। তাই রাহাত খুন থেকে শিক্ষা সকল অভিভাবক সাবধান হোন।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক