রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি

4

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের বিষয়ে বিএনপির মতামত জানতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। বিএনপি নেতারা তাদের বক্তব্য শোনার পর দলীয় ফোরামে এ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে সংগঠন দুটোর নেতাদের জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দেড় ঘন্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়।
বৈঠকে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণসহ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কথা বৈঠক শেষে তুলে ধরেন সংগঠন দুটির নেতারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহব্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বিএনপি নেতারা বিষয়গুলো নিয়ে তাদের ফোরামে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
যেকোনো ধরনের সংকট কীভাবে এড়ানো যায় সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। জাতীয় ঐক্যকে সুদৃঢ় করে কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ কিছু বলেননি। খবর বিডিনিউজের। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও অপসারণের দাবি সামনে আসার পর গত কয়েকদিন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে অবস্থান সুষ্পষ্ট করার কথা বলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত দুদিন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে বৈঠকের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহব্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা গত দুইদিন ধরে দেশের প্রমিনেন্ট যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে, যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে তাদের সাথে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছি। তারই অংশ হিসেবে আজকে (শনিবার) আমরা বিএনপির সাথে আলোচনা করেছি। আপনারা জানেন, আমরা ২৩ তারিখ জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলাম সকল রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল যারা আমাদের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বে এসে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন আমরা ঘটিয়েছি। এটা ছিল প্রাথমিক ধাপ। এখন ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ বিলোপের ক্ষেত্রে আমাদের সামনে বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছে চুপ্পু (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) এর অপসারণ।
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ খুব দ্রæততম সময়ের মধ্যে কীভাবে করা যাবে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য কীভাবে বের করা যাবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে তুলে ধরেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সেনাপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর দেন। সেই রাতেই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এর আড়াই মাসের মাথায় এ নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয় গত ১৯ অক্টোবর মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর।
সেখানে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে মানবজমিন সম্পাদক লেখেন, আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। এর প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদেরকে বলেন, রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্য ‘মিথ্যাচার’ এবং এর মধ্য দিয়ে তার ‘শপথ লংঘন’ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এখন আর পদে থাকার যোগ্য আছেন কিনা, সেই প্রশ্ন উপদেষ্টা তোলেন।
তবে সংসদ না থাকায় তাকে অপসারণের সাংবিধানিক উপায় না থাকায় সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন।
এ ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে বিএনপির একটি প্রতিনিধি, দেশে সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট যাতে তৈরি না হয় সেবিষয়ে জোর দেয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখপাত্র উম্মা ফাতেমা, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহŸায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়োরি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনসহ সাজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।