রামু চা বাগানে বন মোরগ ও মিষ্টি পান

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক লাগোয়া সাতটি দোকান। যেখানে থমকে দাঁড়ানো সারি সারি গাড়ি। মানুষের ভিড়ও প্রচুর। দোকানে পরিত্যক্ত গাড়ির রঙ করা টায়ারের উপরে সারি সারি কড়াই। কড়াইয়ের ঢাকনা উল্টাতেই খাবারের মৌ মৌ ঘ্রাণ। জিবে আসে জল। তরকারি হিসেবে দেশীয় পদের মাছ-মাংসতো আছেই। পাহাড়ি পদের মধ্যে মিলে বন মোরগের মাংস। কক্সবাজারে যাওয়া-আসা করা ক্ষুধার রাজ্যে ডুবে থাকা পর্যটকদের কাছে যাত্রাপথের এই রন্ধনশালায় ঢুঁ মারা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এই সাত দোকানে প্রতিমাসে প্রায় দেড় কোটি টাকার বাণিজ্য হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার মহাসড়ক ধরে যাত্রাপথে রামু চা বাগান এলাকায় হাতে ডান পাশে সুলতান রেস্টুরেন্ট, শখের হাঁড়ি, চা বাগান হোটেল, বাঙালি বাবু, ভাই ভাই হোটেল, রয়েল রেস্টুরেন্ট, আল মক্কা হোটেলের সাথে আছে মহেশখালীর রাজকীয় পান বিতান। যে দোকানগুলো কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে ফিরতি পথে হাতের বাম পাশেই পড়ে। দোকানগুলো পাহাড়ি অঞ্চল লাগোয়া হওয়ায় পর্যটকদের কাছে পাহাড়ি ধাঁচের খাবারের আকর্ষণ আছে। ভাই ভাই হোটেলের মালিক ইউনুছ বলেন, প্রতিদিন ২০-২৫টি আইটেমের তরকারি রান্না করা হয়। প্রতিদিন কতজন খাবার খায় সেটি বলতে পারবো না। তবে এটুকু বলা যাবে যতক্ষন পর্যটক আসবে ততক্ষণ খাবার দেয়া হবে। দৈনিক বেচাবিক্রি নিয়েও তথ্য দিতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে এক দোকান কর্মচারী বলেন, প্রতিদিন এই সাত দোকানে আনুমানিক হাজারের উপরে মানুষ ভাত খায়। নানা পদের আইটেম থাকায় অনেকেই এখানে ভাত খেয়ে খুশি হন। দোকানগুলোতে এক তরকারি দিয়ে ভাত খেতে চাইলে খুব কম দামে খাওয়া যায়। আবার ব্যতিক্রমি নানা পদের তরকারির দাম ভিন্ন ভিন্ন থাকায় দামও ভিন্ন হয়।
দোকানদার ও স্থানীয়রা জানায়, প্রতিটি দোকানেই রাজ হাঁস, দেশী মুরগী, টার্কি মুরগী, পাহাড়ি বন মোরগ, কবুতর, কোয়েল পাখি, মহিষের কালাভুনা, মুরগীর গিলা কলিজা, পাতি হাঁস, গরুর মাংস, গরুর পায়া, সাগরের সুরমা মাছ, রূপচাঁদা, বাইলা মাছ, টুনা মাছ, কোরাল, টেংরা মাছ, নারিকেলি মাছ, বাটা মাছসহ নানা পদের ভর্তা পাওয়া যায়। লোকেমুখে প্রচার আছে, দোকানগুলোতে হরিণের মাংসও পাওয়া যায়। সকাল ১১টা থেকে প্রতিটি দোকানে বেচাবিক্রি শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে দোকানদার ও দোকান কর্মচারীদের হাঁকডাক শুরু হয়। পদ ভেদে তরকারির মূল্য ধরা হয় ১০০-৩৫০ টাকা। আবার এক পদের তরকারি দিয়ে ১৫০ টাকাতেও দুপুরে পেটভরে ভাত খাওয়া যায়। খাবার শেষে পাশের দোকান থেকে মুখে গুজে নেয় নানা দামের মহেশখালীর রাজকীয় মিষ্টি পান। পানে চুন, খতের লেপনে চাহিদা অনুসারে দেয়া হয় বাহারি পদে জর্দাও।
রাজকীয় পান বিতানের মালিক বলেন, ‘আমার দোকানে পাঁচ টাকা থেকে ১০০ টাকা দামের পর্যন্ত পান আছে। এরমধ্যে ১২০ জর্দার ইন্ডিয়ান, শাহী পান, রূপসী বাংলা পান, স্টবেরি ফ্লাওয়ার পান, স্পেশাল পান, আগুন পান, রাজকীয় মিষ্টি পান, বউ জামাই পান, শালী দুলাভাই পান, গিফট সুপার স্টার সান ফ্লাওয়ার পান পাওয়া যায়। গ্রাহক যে পান খেতে চায় সে পান দেয়া হয়। দূরদূরান্তের পর্যটকরা পার্সেল করেও এখানের পান নিয়ে যায়।’
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়া পর্যটক রাজেশ দে, তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবারই সড়কপথে যাওয়া আসা করতে যে কোন একটি দোকানে দুপুরে কিংবা রাতে খাবার খাওয়া হয়। খাবারের মান ভালো হওয়ায় পেটভরে খাওয়া যায়। দোকানগুলোতে অতীতে খেয়েছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা বেশি। আমরা কক্সবাজারের নামিদামি হোটেলের চেয়ে দোকানগুলোতে খেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। তবে দোকানের পরিবেশ আরো একটু উন্নত হওয়া দরকার।’
সেখানকার একটি দোকানের কর্মচারী নজির আলম বলেন, ‘শীতকালে প্রতিটি দোকানেই মানুষের ভিড় থাকে। প্রচুর গাড়ি দাঁড়ায়। খাবারের দোকানগুলোতে কমপক্ষে ৪০জন বেতনভুক্ত কর্মচারী আছে। যারা এসব দোকানে চাকরি করেই সংসার চালায়।’