রামুতে বন্যার পানিতে দুইজনের মৃত্যু, নিখোঁজ ২

2

রামু প্রতিনিধি

কক্সবাজারের রামুতে টানা বর্ষণ এবং উজান থেকে আসা পানির স্রোতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরও ২ জন। পাহাড়ধসে ২০টিরও বেশি বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দশ হাজার পরিবার। বাঁকখালী নদীসহ বিভিন্ন ছরা-খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া চারজনের মধ্যে দুই জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার ছৈয়দ হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন (২২) এবং ঈদগড় ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়া এলাকার মৃত লইগ্যা রাখাইন এর ছেলে চচিং রাখাইন (৫৫)। নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন গর্জনিয়া ইউনিয়নের ছালেহ আহমদের ছেলে রবিউল আলম (৩৫) এবং ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের লম্বরীপাড়া এলাকার নুরুল কবিরের ছেলে মো. জুনাইদ (১০)।
গর্জনিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আবুল কাশেম জানান, স্থানীয় পূর্ব জোমছড়ি এলাকার ছৈয়দ হোসেনের ছেলে সিএনজি ড্রাইভার আমজাদ হোসেন সকাল এগারটার দিকে জুমছড়ি এলাকার কবরস্থান রোড দিয়ে যাওয়ার সময় পানির স্রোতে তলিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর স্থানীয়রা বিকাল পাঁচটার দিকে একশ গজ দূর থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি নিয়ে রাত আটটার দিকে আমজাদ হোসেনের নামাজে জানাজা সম্পন্ন করে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় ছালেহ আহমদের ছেলে রবিউল আলমের ছেলে দিনমজুর রবিউল হাছান বাঁকখালী নদীর উজানে কাজ করতে যাওয়ার সময় স্রোতের পানিতে ভেসে যায়। তাকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দিদারুল আলম জানান, মো. জুনাইদ এলাকাবাসীর সাথে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পাহাড়ি ঢলে বাঁকখালী নদীর পানির স্রোতে উজান থেকে ভেসে আসা লাকড়ি ধরছিল। সকাল এগারটার দিকে নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে একটা কাঠের গুঁড়ি ধরতে গিয়ে মো. জুনাইদকে ভেসে যায়। তাকে বাঁচাতে স্থানীয় ইব্রাহিম সওদাগরের ছেলে মো. আরিফ উল্লাহ (১৮) নদীতে ঝাঁপ দেয়। পরে স্থানীয়রা আরিফ উল্লাহকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করতে পারলেও জুনাইদকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। মো. আরিফ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঈদগড়ের মৃত চচিং রাখাইনের মেয়ে লাইচিং রাখাইন জানান, ঈদগড় ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বৈদ্যপাড়া এলাকার আদিন্যা খাল নামক নদী পার হয়ে সকালে মন্দিরে যাওয়ার সময় নদীর পানিতে ভেসে যায়। স্থানীয়রা তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম জানিয়েছেন, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের টিলাপাড়া এলাকার নূর আহমদের পুত্র হতদরিদ্র জাফর আলমের বসতবাড়িটি প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড়ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় জাফর আলমের তিন মেয়ে সহ ৫ জন আহত হয়েছেন। আহত এক মেয়েকে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম ২ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এখনো ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্গতদের বিতরণের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়াও চিড়া, গুড়, স্যালাইনসহ শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।