রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত

2

ঢাকা প্রতিনিধি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রপতির পদে মো. সাহাবুদ্দিনের থাকা না-থাকার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। গণআন্দোলনে সরকার পতনের পর বর্তমান পরিস্থিতিতে থাকার মধ্যে রাষ্ট্রপতির অপসারণ বিষয়ে সংবিধান মেনে চলতে হবে কি না, এই বিষয়টি নিয়েও ভাবছে সরকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডাকা ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন।
গত কয়েকদিন ধরে রাষ্ট্রপতি পদে নতুন মুখ খুঁজতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী তৎপরতার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়। তবে এ ব্যাপারে গতকালই প্রথম সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা করা হয়। বৈঠকসূত্রে জানা গেছে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ব্যাপারে ছাত্রদের দাবি রয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে এবং সেটা তারা চায় না। এ পরিস্থিতিতে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাষ্ট্রপতি ইস্যুটি রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছি আমরা। প্রচেষ্টা হচ্ছে রাজনৈতিক ঐকমত্যের। রাজনৈতিক দলগুলোকেই তাদের সিদ্ধান্ত এবং অবস্থান স্পষ্ট করে যারা ‘গণদাবি’ করছেন তাদেরকে জানাতে হবে। আমরা তো একটা ‘স্বাভাবিক’ পরিবেশে নেই, একটা ‘অস্বাভাবিক’ পরিবেশে আছি। এখন সব কিছু সংবিধান মেনে করতে হবে সেটা সম্ভব হবে কি না, এটা আমাদের ভাবতে হচ্ছে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র কোথাও খুঁজে পাননি বলে একটি সংবাদ মাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর রাষ্ট্রপ্রধানের পদত্যাগ বা অপসারণের যে দাবি উঠে, তার মধ্যে এই প্রথম বৈঠকে বসল উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সেই বৈঠকের পর ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় এই বিষয়টিই।
রাষ্ট্রপতির ‘মিথ্যা’ বক্তব্যে শপথ ভঙ্গ হয়েছে- এমন মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা তাকে অপসারণের যে বিধানের কথা সাংবাদিকদের বলেছেন, এরপর সেই বিধান নিয়েই শুরু হয় আলোচনা। রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশন বা অপসারণের জন্য সংসদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু সেই সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে এই পথ আর খোলা নেই।
আইনজীবীরা গত কয়েকদিনে জানিয়েছেন, ভেঙে দেওয়া সংসদ রাষ্ট্রপতি তখনই ফেরাতে পারেন, যখন দেশে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। আবার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ারও সুযোগ নেই, কারণ, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিজেই এই ব্যাখ্যা চাইবেন, যখন আইনে অস্পষ্টতা তৈরি হয়। এই বিষয়গুলো সামনে আসার পর বঙ্গভবনে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির পাশাপাশি মোতায়েন হয়েছে বাড়তি সেনা সদস্য, বসানো হয়েছে কয়েক ধাপের ব্যারিকেড।
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবির প্রসঙ্গটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা জানিয়ে রিজওয়ানা বলেন, এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের যে দাবিটা উঠেছে এটা নিয়ে আমরা কীভাবে ডিল করব? আমরা বলছি এটি একটি রাজনৈতিক বিষয়। যেহেতু দাবিটা জনগণের থেকে এসেছে; আর এটা আমাদের সরকারটা গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে এসেছে। কাজেই সংবিধানের প্রত্যেকটি বিষয় আক্ষরিত অর্থে মানা সম্ভব হবে কি না, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সেটা মানতে সেখানে ব্যারিয়ার বিষয়গুলো আমাদের ইজি হয়ে যায় কিনা আমাদের কথা হয়েছে। এটা যেহেতু রাজনৈতিক আলোচনা। এটাকে আমরা লিগ্যাল বা কনস্টিটিউশনাল ইস্যু হিসাবে দেখছি না।
সিদ্ধান্ত নিতে কত সময় লাগবে- এই প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, এ সিদ্ধান্ত নিতে সময়টা আসলে এরকম করে বলা যায় না। এখন রাজনৈতিক দলগুলোর উপর নির্ভর করবে। তারা কোন অবস্থানে যাবে, তাদের সাথে আমাদের কী কথা হয়, তাদের আশঙ্কার জায়গা কোথায়, সে আশঙ্কাগুলো বাস্তবসম্মত কিনা।
এটা খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে আমরা আছি তাও না; আবার বিলম্বিত করাও যাচ্ছে না। কারণ, একটা পথে দীর্ঘদিন ধরে একটা অনিশ্চয়তা কেউ আশা করবে না। বিশেষ করে যেখানে ‘গণদাবি’ উঠছে সেখানে বিষয়টিতে বিলম্বিত করার হয়ত সুযোগ নেই। কতদিন এটা বলা যায় না।
এর আগে সোমবার রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের ব্যাপারে সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ, তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।