রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

12

পূর্বদেশ ডেস্ক

রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরানো দ্রুততর করতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশন গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় এ বিষয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিজার্স (এসওপি) সই হয়েছে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খায়রুল কবির মেনন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। আর ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট বিষয়ক মহাপরিচালক বেস জাভিদ।
সভায় যুক্তরাজ্যের অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধমন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমও অংশ নেন।
ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে ব্যর্থ হওয়া ব্যক্তিদের পাশাপাশি অপরাধী এবং ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও অবস্থানকারীদের দ্রুততার সঙ্গে ফেরত পাঠানোর জন্য এই চুক্তি হয়েছে। খবর বিডিনিউজ’র
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর মার্চ পর্যন্ত এক হিসাবে, আগের ১২ মাসে যারা যুক্তরাজ্যের ভিসার নিয়ম ভেঙে সে দেশে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদের মধ্যে সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশিরা রয়েছে উপরের দিকে।
এ সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। শিক্ষার্থী, শ্রমিক বা ভিজিটর ভিসায় ব্রিটেনে ঢোকার পর তারা সেখানে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। সেই আবেদনে সাড়া পেয়েছেন মাত্র ৫ শতাংশ বাংলাদেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধমন্ত্রী মাইকেল টমলিনসকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “অবৈধভাবে মানুষের আসা বা থাকা ঠেকাতে তাদের ফেরত পাঠানো দ্রæততর করা আমাদের পরিকল্পনার অংশ। বাংলাদেশ আমাদের মূল্যবান অংশীদার এবং এ বিষয়ের পাশাপাশি অন্য অনেক বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক জোরদার হওয়ার বিষয়টি সত্যিই দারুণ।”
তিনি বলেন, “এ ধরনের চুক্তি যে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তার সুস্পষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। বৈশ্বিক সমস্যায় দরকার বৈশ্বিক সমাধান এবং সবার জন্য ন্যায্য পদ্ধতি তৈরি করার জন্য বাংলাদেশ এবং অন্য অংশীদারদের সঙ্গে আমরা কাজ করতে চাই।”
হাই কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবৈধদেরকে ফেরাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের হওয়া এসওপি’র ধারাবাহিকতায় এবারের এসওপি সই হয়েছে। আগের এসওপির আওতায় যেভাবে ব্রেক্সিটের আগে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশিদের ফেরানো হত, এবারও সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতির কথা তুলে ধরেন হাই কমিশনার মুনা তাসনীম।তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সহযোগিতায় গত এক দশকের বেশি সময় ধরে অনেক অবৈধ বাংলাদেশিকে ফিরিয়েছে হাই কমিশন। সে কারণে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশিদের সংখ্যা ‘খুব সামান্য’। এবং বাংলাদেশ হাই কমিশনের সহযোগিতায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। ভালো বিষয় হচ্ছে, অবৈধ নাগরিকদের হিসাবে বাংলাদেশ প্রথম ১০টি দেশের মধ্যেও নেই।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় অবৈধদের ফেরানোর বিষয়ে এসওপি সই হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে দক্ষদের বৈধ পথে অভিবাসনের বিষয়েও আলোচনা হয়।
টেলিগ্রাফ লিখেছে, যুক্তরাজ্যের ভিসা নিয়ে সেখানে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করা যায়, সাধারণত সেটা কয়েক মাস। কিন্তু আশ্রয় আবেদন করে মানুষ সেখানে অনির্দিষ্টকালের জন্য থেকে যাওার সুযোগ পায়। মানবাধিকার আইনসহ নানা কারণে অবৈধ অভিবাসীদের তাদের নিজ নিজ দেশ ফেরত পাঠাতে বাধার মুখে পড়তে হয় যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
গত মাসে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু নথি ফাঁস হয়, যেখানে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। তাতে দেখা যায়, সে বছর বিভিন্ন ধরনের ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্য যাওয়ার পর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন ২১ হাজার ৫২৫ জন। অর্থাৎ, প্রতি ১৪০ জনে এক জন যুক্তরাজ্য যাওয়ার পর আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।
গত এক দশকে ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়া এক লাখ ২০ হাজরের বেশি মানুষ রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এই আবেদনকারীদের মধ্যে সবার উপরে রয়েছেন পাকিস্তানি নাগরিকরা। প্রায় ১৭ হাজার ৪০০ পাকিস্তানি আশ্রয় প্রার্থনা করে আবেদন করেছেন। তারপরই বাংলাদেশের অবস্থান। ভারতীয় ৭,৪০০ জন, নাজেরীয় ৬,৬০০ জন এবং আফগানিস্তান থেকে যাওয়া ৬,০০০ জন রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।
যুক্তরাজ্য গত বছর ২৬ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠায়, যা তার আগের বছরের তুলনায় ৭৪ শতাংশ বেশি। এর আগে যুক্তরাজ্য আলবানিয়ার সঙ্গে ‘ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন’ চুক্তি করে। ওই চুক্তির পর ছোট ছোট নৌকায় করে সে দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে আসা মানুষের সংখ্যা ৯০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে।