রাঙ্গুনিয়ায় শিমে চাষে সফল সহস্রাধিক কৃষক

113

রাঙ্গুনিয়ায় যেদিকে থাকাবে সেদিকে সবুজ শিম চাষের দৃশ্য। সড়ক বীল চর বাড়ির আঙ্গিনা ধান চাষের আইলের ফাকে ফাকে চাদ কিংবা বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে শীম চাষ। থোকায় থোকায় শীমের ফুল আর শীমের থোকা। চোখ জুড়িয়ে যায় যে কেউ শিম চাষের দৃশ্য দেকে। শীত মৌসুমে ধান চাষের পাশাপাষি এ উপজেলায় ব্যাপক ভাবে শিম চাষ হয়। শিম চাষ অল্প পূঁজিতে ব্যাপক আয় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। তা আবার শিম চাষের জন্য খাজনা দিয়ে জমির প্রয়োজন হয়না। শুধু সড়কের খালি পরিত্যাক্ত ও নানা শাকসবজি এবং ধান চাষের আইলের ফাকে শিম চাষ করে শত বেকার নারী পুরুষ অর্থনৈতিক ভাবে স্বাভলম্বী হয়েছে। শিম চাষে বদলে দিয়েছে অনেকের বেকার জীবন। সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রাজানগর, দক্ষিন রাজানগর, পারুয়া, লালানগর, হোছনাবাদ, সরফভাটা, পৌরসভা ইউনিয়নে চলতি বছরে প্রায় ৫শ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। এসব এলাকায় উৎপাদিত শিম এবং কাঁচা শিমের বিচির স্বাদ বেশি হওয়ায় পুরো চট্টগ্রাম জেলায় এখানকার শিম ও বিচির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে এ এলাকায় উৎপাদিত শিম বাজারজাত করতে কৃষকদের তেমন বেগ পেতে হয় না। প্রতিদিন রাঙ্গুনিয়া থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা শিম কিনে নিয়ে যায়। চলতি বছর শিমের দাম তুলনামূলকভাবে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে যা কৃষকদের জন্য সুখের বিষয় হিসাবে দেখছে কৃষি বিভাগ। সূত্রটি জানায়, এ বছর মৌসুমের শুরতে প্রতি কেজি শিম ১শ টাকা থেকে ১২০ টাকায় এবং প্রতি কেজি বিচি ১শ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহেদুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে কমপক্ষে দেড় থেকে দুইশ কৃষক শিমচাষ করে সফল হওয়ায় তাদের পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। একই কথা জানালেন সরফভাটা চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি জানান, তার ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ লোক কৃষি কাজের সাথে জড়িত। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিমচাষ করে সারা বছরই পরিবারের খরচ জুগিয়ে থাকে। উত্তর রাঙ্গুনিয়ার লালানগর ইউনিয়নের ঘাকরাখীল ৫ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে শিম চাষের দৃষ্টি সকলকে অবাক করে দেয়। পথচারীরা দৃষ্টি জুড়ে শিম চাষের দৃশ্য অবলোকন করে নিজেকে শিম চাষ করার প্রেরনা পাচ্ছে বলে জানা যায়। সড়কের পাশে শিম চাষের সাথে জড়িত আলমশাহ পাড়া গ্রামের আমেনা খাতুন (৪২) জানান, গত বছর স্বামীর অস্বচ্ছল সংসারে অভাবের তাড়নায় সকলের দাড়ে দাড়ে ঘুরেছি। কেউ তেমন সহযোগিতা না করায় ৩ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে নানা কষ্টে দিন যাগন করেছি। কিছু করার তেমন সামর্থ ছিলনা। শেষে সরকারি সড়কের পাশে শিম চাষ করে নিজেদের অভাবের সংসারে সুখের দেখা পেয়েছ্।ি বর্তমানে শিমের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এবারে শিম চাষে ব্যাপক ফুল ফুটেছে। ফুলের ফাকে ফাকে শিমের থোকা নিজেকে এখন আর অমহায় মনে হয়না। মৌসমে প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ মন শিম বিক্রি করে থাকি শহরের পাইকারী সবজি ব্যবসায়ীদের কাছে। শিমচাষ করে সফল চাষি হিসাবে পারুয়া ইউনিয়নের কৃষক আবদুস সাত্তার জানান, যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ হানা না দেয় শিমচাষে কোনো লোকসান নেই। চলতি বছর নিজেই ১ একরের মতো জমিতে শিমের চাষ করেছেন। ১ একর জমিতে চাষ করতে বীজ, সার, কীটনাশক ও খুঁটিসহ অন্যান্য খাতে তার খরচ হয়েছে আড়াই থেকে দেড় লাখ টাকার মতো। ইতোমধ্যে উৎপাদিত শিম বিক্রি করে খরচ তুলে নিতে পেরেছেন। এখন যা বিক্রি করবেন তা লাভ। আরো এক থেকে দেড় তিন লাখ টাকার শিম ও বিচি বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন। দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জমিতে শিম চাষে বদলে দিয়েছে বেকার চিত্র। বেগুন, মুলা, নানা শাকসবজি ও ধান চাষের আইলের ফাকে ফাকে শিম চাষাবাদ গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। বেকার যুবকরা নিজেদের পায়ে দাড়াতে শিম চাষে অগ্রসর হচ্ছ্।ে সামান্য অর্থ দিয়ে মাইলের পর মাইল শিম চাষ করে অর্থনৈতিক স্বচ্ছল হয়েছে শত বেকার যুবক। শিম চাষের জয়গান রাঙ্গুনিয়ার সবত্র ছড়িয়ে পড়েছে। সরফভাটা ইউনিয়নের ভূমিরখীল গ্রামের বেকার যুবক কামাল উদ্দিন (৪০) জানান, শিম চাষের জয়গানের কথা। তিনি বলেন বেকার থাকা অবস্থায় অনেকের কাছে অনেকবার নানাভাবে অপমানিত হতে হয়েছে। বেকার জীবন খুবই দুঃখের। সংসারের টানাপোড়া নিয়ে নিজেকে খুবই যখন অসহায় মনে হয়েছিল কিছু একটা করার জন্য নিজের কাছে তেমন অর্থও ছিলনা তখন অন্যের দেখা দেখিতে শিম চাষে জড়িয়ে পড়ি। শিম চাষ করে গত বছর থেকে অর্থনেতিক মুক্তি পেয়েছি। তিনি জানান, আমাদের এখান থেকে চট্টগ্রাম শহর সহ নানা জেলায় শিম ব্যবসায়ীরা শিম কিনে নিয়ে যায়। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ইলিযাছ জানান, রাঙ্গুনিয়ায় প্রায় ৫শ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের সরাসরি তদারকি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শের কারণে চলতি বছর শিমের ফলন খুব ভালো হয়েছে। তিনি জানান, এ অঞ্চলের শিমের চাহিদা থাকায় কৃষকরা শিমচাষের দিকেই ঝুঁকছে বেশি। চট্টগ্রাম এবং আশপাশের এলাকায় ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ এলাকায় উৎপাদিত শিম ও বিচি খুব দ্রæত বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে। এ কারণে শিমচাষে জড়িত কৃষকরা আর্থিকভাবে সুবিধা পাচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার জানান, রাঙ্গুনিয়ায় সবত্র শীম চাষের দৃশ্য। কৃষকরা শীত মৌসুমে ব্যাপকভাবে স্বল্প পূজিতে শীম চাষ করে থাকে। ফলনও হয় অনেক বেশী। শীম চাষের প্রচুর সম্ভানা এ উপজেলায়। আমরা শীম চাষে সকল সহযোগিতা ও পরামর্শ দিযে থাকি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদর রহমান জানান, উপজেলার অধিকাংশ জমিতে শিম চাষ হচ্ছে এবারে। শিম চাষ করে অনেকে অর্থনৈতিক ভাবে সফল হয়েছে। শিম চাষে চাষিদের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।