রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে ৩০০ কোটি টাকার আমন ধান উৎপাদন

2

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদনকারী রাঙ্গুনিয়া গুমাই বিলে ভারী বৃষ্টি, বন্যা, পোকার আক্রমণসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। গতবার যেখানে গড় ফলন ৫.১ মেট্রিক টন ছিল, সেখানে এবার ফলন বেড়ে ৫.২৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এবার রাঙ্গুনিয়ার কৃষকরা কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার ধান উৎপাদন করেছেন বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে দেশের ধানের গোলাখ্যাত গুমাইবিলেই উৎপাদিত হয়েছে ৫৬ কোটি টাকার ধান। অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের বাম্পার ফলন ও ধানের দাম পাওয়ায় রেকর্ড হয়েছে ধান উৎপাদনে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কৃষিতে কৃষকের অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে। তবে চট্টগ্রাম সহ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল গুমাই বিলের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিযে সরকারের কোন পদক্ষেপ না থাকায় এখানকার কৃষকরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। কৃষকরা গুমাই বিলকে মাস্টার প্ল্যান করে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার জোর দাবি জানিয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ১৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের আবাদ হয়েছে। যেখানে গড়ে ৫.২৫ মেট্রিক টন হারে মোট ৭৭ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। একইভাবে ৬১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের আবাদ হয়েছে। যেখানে গড়ে ৬.৫৫ মেট্রিক টন হারে মোট ৩ হাজার ৯৯৫.৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। এছাড়া স্থানীয় জাতের ১৪০ হেক্টর জমিতে ৩.৯০ মেট্রিক টন গড় হারে মোট ৫৪৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমি থেকে ৫.২৩ মেট্রিক টন গড় হারে ৮১ হাজার ৭১৬.৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। এরমধ্যে গুমাইবিলের ৩২০০ হেক্টর জমি থেকে ১৬ হাজার ৯৬৭.৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। সরেজমিনে চট্টগ্রামের শস্যভাÐার গুমাইবিলে গিয়ে দেখা যায়, বিলের প্রায় শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। বিলের ধারে, সড়কের পাশে কিংবা গৃহস্থের উঠানে চলছে ধান মাড়াইয়ের মহাযজ্ঞ। অনেক বেপারি ঘরে গিয়েই ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, গত কযেক বছর ধরে কৃষিতে ভালো ফলন হওয়ায় কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কৃষকরা আবারো তাদের বাপ দাদার পেশা কৃষিতে বিনিয়োগ করছেন।
কৃষকরা বলছেন, গেল বারের তুলনায় এবার বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। গতবার যেখানে ধানের দাম ২৫.২৭ টাকা ছিল, সেখানে এবার সাদা পাজাম ৩৫ টাকা কেজি এবং অন্যান্য ধান ৩৩ টাকা কেজি হারে বাজার দাম পাওয়া যাচ্ছে। এই হারে ধানের দাম পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করে কৃষকদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
গুমাইবিলের চন্দ্রঘোনা অংশের পাটান পাড়া গ্রামের কৃষক মো. নুরুল হক কৃষক জানান, তিনি ১১০ কানি (১৮ হেক্টর) জমি থেকে ৬ মেট্রিক টন হারে ফলন পেয়েছেন।
আধুর পাড়া অংশের কুষক নবির হোসেন নামে অন্য একজন কৃষক ৪০ কানি জমিতে আবাদ করেছেন। তিনি জানান, ব্রি–ধান ১০৩ জাতের আবাদ করেছেন তিনি। যেখান থেকে সাড়ে ৭ মেট্রিক টন হারে ধান পেয়েছেন। কানি প্রতি ১২৫ আড়ি ধান পেয়েছেন বলে জানান তিনি। অপর কৃষক মোহাম্মদ হোসেন জানান, তিনি ৭০ কানি (সাড়ে ১১ হেক্টর) জমি ধান পেয়েছেন। এরমধ্যে বন্যা সহনশীল ব্রীধান ৫১ জাতের আবাদ করেছেন। ভালোই ফলন পেয়েছেন। তবে বন্যা না হলে ফলন আরও বাড়তো। তিনি জানান, গুমাইবিল নিয়ে কর্তৃপক্ষকে ভাবা দরকার। কারণ এটি দখল হয়ে যাচ্ছে, খালগুলোর তলানি ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, আমরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নির্দেশে মাঠ পর্য্যাযে দুই ফসলি আমন ও বোরো চাষে কৃষকদের পাশে থেকে সহযোগিতা পরামর্শ দিয়ে আসছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। গতবারের চেয়েও এবার ধানের ফলন বেড়েছে। বাজারেও দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তাই কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে পরের মৌসুমে কৃষকরা আরও বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।