মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া
রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্য হাতির আক্রমণে গত ৫ বছরে কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে মানবেতর জীবন যাপন করছে অর্ধশতাধিক। ফসলের ক্ষতি করছে ব্যাপকভাবে। বিশেষ করে কৃষকের ধান চাষ ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়াও কৃষকের নানা উৎপাদিত ফসল, কোদালা চা বাগান প্রায় সময়ে হাতির তান্ডবে চা বাগানের ক্ষতি ও চা শ্রমিক নিহত করেছে। বন্য হাতির আত্রমণে গবাদি পশু মারা যাওয়ার ঘটনায় গবাদি পশু লালনপালনকারীরা আতঙ্কে থাকে। কোদালা, শিলক, পদুয়া, সরফভাটা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন চলছে বন্য হাতির তান্ডব।
সরফভাটা ইউনিয়নে খাবারের খোঁজে বন থেকে লোকালয়ে নেমে এসেছে বন্য হাতির পাল। হাতিগুলোকে বনে ফেরাতে ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করছেন বন বিভাগ।
সরফভাটার মীরেরখীল বাজারে সম্প্রতি রাতে বন্য হাতির চলাফেরা দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। যা বাজারের সিসিটিভি ফুটেজেও ধরা পড়েছে। আগের দিন রাতেও একাধিক বন্য হাতির পাল লোকালয়ে এসেছিল। এসময় এক কৃষকের দুটি গরু মেরে ফেলে। এভাবে গেল কিছুদিন ধরে মীরেরখীলের বিভিন্ন এলাকায় হাতির পাল হানা দিয়ে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি করছে। রাতের অন্ধকারে হাতির আনাগোনায় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে।
এদিকে গেল শনিবার উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ত্রিপুরা সুন্দরী এলাকায় হানা দেয় বন্য হাতির পাল। এসময় বন্য হাতির পাল স্থানীয় মো. ওসমানের গোয়াল ঘর ভেঙে ফেললে একটি গাভি মারা যায় এবং আরও পাঁচটি গবাদি পশু আহত হয়। এর আগে ওইদিন রাত দেড়টার দিকে ত্রিপুরা সুন্দরী গ্রামে হানা দেয় বন্য হাতির পালটি। শস্যক্ষেত থেকে শুরু করে গৃহস্থ বাড়িতে রীতিমতো তান্ডব চালায়। এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা যায়, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতির লোকালয়ে হানা দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গেল কয়েক বছর ধরে প্রায় প্রতি রাতেই দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার চার ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লোকালয়ে হাতি আসায় নির্ঘুম রাত কাটছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান বলেন, পটিয়া হয়ে বোয়ালখালী, সরফভাটা, শিলক, পদুয়া, রাইখালী কাপ্তাই হয়ে শিলছড়ি পর্যন্ত হাতির একটা করিডোর আছে। এই পথে হাতি আদিকাল থেকেই চলে আসছে। তবে আগের তুলনায় হাতির সংখ্যাও এখন বেড়েছে। অন্তত ৪০টি হাতি এখন এই পথে চলাচল করে। তিনি বলেন, হাতি মানুষের দ্বন্দ্ব কমাতে বিভিন্ন সভা-সেমিনার, মাইকিংসহ নানা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে হাতির আক্রমণে ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ এবং মারা যাওয়া পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়ম অনুসারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তবে হাতি আসলে আতংকিত না হয়ে তাকে ফিরে যেতে কৌশলে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং আমাদের জানাতে হবে।