রাঙ্গুনিয়ায় ভাঙনের কবলে বসতবাড়ি-কৃষিজমি

2

মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া

প্রতিদিন রাতে নদীপাড়ের মানুষের চরম আতংক ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটে। রাতে ও দিনে সমান তালে রাক্ষুসী কর্ণফুলী নদীর পেটে চলে যাচ্ছে মানুষের বসতঘর ও ফসলী জমি। শত শত পরিবারকে বাপ দাদার ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। গত ১ যুগে কমপক্ষে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলী জমি। এবারে বন্যায় টানা বৃষ্টি ও কাপ্তাই বাঁধের পানি ছাড়ায় নদীর ¯্রােত তীব্র আকার ধারণ করে। এতে নদীপাড়ের মানুষের বসতবাড়ি রাক্ষুসী কর্ণফুলী নদীর পেটে চলে যায়। দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার ৪টি ইউনিয়ন কোদালা. সরফভাটা, শিলক, বেতাগী ইউনিয়নের নদীপাড়ের অর্ধ শতাধিক বসতবাড়ি ও ফসলী জমি কর্ণফুলী নদীতে বিলীন হযে যায়। নদী তীরবর্তী এলাকার অনেক অসহায় গরীব পরিবার বসতবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে সহস্রাধিক মানুষের বসতবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ফসলী জমি। এতে আতংকে দিন কাটাচ্ছেন এসব গ্রামের মানুষ। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্লক স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বেতাগী ইউনিয়নের কাউখালী, কাঙালি শাহ্ মাজার সংলগ্ন এলাকা, হাজী ইদ্রিছ মিয়ার ঘাট, মাতব্বর বাড়ি, চিরিয়া, মৌলভী সাহেবের ঘাট, চান্দরবাড়ি, কুলালপাড়া, কাটাখালী, গোলাম বেপারী হাট, বশর মাস্টার বাািড় এলাকাসহ বিভিন্ন স্পটে নদী ভাঙন দেখা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
অন্যদিকে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে সরফভাটা ইউনিয়নের পশ্চিম সরফভাটা মৌলানা গ্রাম থেকে পুরাতন সিকদার হাট পর্যন্ত ৫০০ মিটারেরও অধিক এলাকা। এই বর্ষাতেই এসব এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি-ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় না পেয়ে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে নদীপাড়ের বসতঘরেই থাকছেন।
বেতাগী ইউনিয়নের কাউখালি গ্রামের বাসিন্দা আমির আলী বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরেই ভাঙনে ফসলি জমি হারিয়েছি। গেল বর্ষায় বন্যা, টানা বৃষ্টি ও কাপ্তাই বাঁধের পানির স্রোতে বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যায়। আমার বসতভিটার সামনের কয়েকটি কক্ষ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। অন্যত্র যাওয়ার জায়গা না থাকায় পিছনের কক্ষগুলোতেই আমরা থাকছি। যেকোন সময় যা আছে তাও এ বন্যায় পানির স্রোতে চলে যাবার আশংকা দেখা দিয়েছে। রাতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি পারিবার পরিজন নিয়ে।’
বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, ‘বেতাগী ইউনিয়নের তিন দিকেই কর্ণফুলী নদী। বর্ষা এলেই নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙন দেখা দেয়। ইতোমধ্যেই বেশকিছু এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধক ব্লক স্থাপন হয়েছে। চলমান ভাঙন ঠেকাতে ব্লক স্থাপন করে নদীপাড়ের বসবাসকারীদের রক্ষা করতে হবে। মানুষের যাওয়ার জায়গা নেই। এবারও নদীপাড়ের অনেকের বসতবাড়ি ও ফসলী জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়।’
সরফভাটা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বর্ষা এলেই রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে নদী ভাঙনের আতংকে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতে হচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রকল্প নেওয়া হবে। আশা করি ভবিষ্যতে নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’
কর্ণফুলীর নদী ভাঙনের বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বন্যা ও টানা বৃষ্টিতে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বেতাগীতে কিছু জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে কি করা যায় দেখব।’