মাসুদ নাসির,রাঙ্গুনিয়া
রাঙ্গুনিয়ায় টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত নিম্নাঞ্চলের পানি নেমে গেছে। উপজেলার মূল সড়কসহ ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার অভ্যন্তরীণ কমপক্ষে ২০টি সড়ক চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত ২/ ৩ দিন থেকে পানি নামতে শুরু করেছে বলে জানান পানিবন্দী বাসিন্দারা।
এলাকাবাসী ও স্থানীয়দের কথা বলে জানা যায়, গত কযেক দিনের টানা বর্ষণে উত্তর রাঙ্গুনিয়ার রাজা নগর, ইসলামপুর হোছনাবাদ স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, পারুয়া, লালানগর ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করে বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ে কমপক্ষে ৫শতাধিক ঘর বাড়ি। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবার গুলো চরম নাজুক পরিস্থিতির মাঝে খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। কখন বন্যার পানি নেমে যাবে সে দিন ক্ষণ নিয়ে তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ পড়েছে। অনেক স্থানে পানি নেমে যাওয়ায় ভেসে উঠছে ক্ষয় ক্ষতির চিহ্ন। অনেকের ঘরে পানি নেমে যাওয়ার সময় বসতবাড়ির নীচে ঘরের আশ পাশ লন্ডভন্ড করে দেয়। অনেকের মাটির ঘর পানি চুপসে ধসে পড়েছে।
লালা নগর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল খালেক জানান, টানা বৃষ্টিতে আমার ও আমার পাশের ঘরে হাটু সমান পানি ৬ দিন ধরে অবস্থান করেছে। আমরা কেউ ঘরে থাকতে পারিনি। এখন পানি নেমে যাওয়ার ফলে আমাদের ঘরে বসবাস করার মতো পরিবেশ নেই। অনেকটা বসত বাড়ি হারা বলা যায়। আমাদের এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করা ছাড়া উপায় দেখছি না।
অপর দিকে রাঙ্গুনিয়া মাছ চাষিদের পুকুর থেকে লাখ লাখ টাকার মাছ ও মাছের পোনা পানির স্রোতে ভেসে যায়। হোছনাবাদ ইউনিয়নের মাছ চাষী খোরশেদ আলম জানান, এবারে প্লাবনে আমার ৫টি বড় পুকুর থেকে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মাছ ও নানা জাতের মাছে পোনা ভেসে যায়। ২০১৭ সালে একই ভাবে ভয়াবহ বন্যায় আমার ৬টি পুকুরে মাছ ও মাছের পোনা ভেসে যায়। সেবারেও এর চেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে।
গুমাই বিলের কৃষক মো. নুরুল হক জানান, এখন আমাদের একটি চাওয়া দ্রত সময়ের মধ্যে গুমাই বিল থেকে পানি নেমে যাওয়া । পানি নেমে গেলে রোপিত আমন চারা কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে জানতে পারবো।
বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফি জানান, কর্ণফুলী নদীর পাড়ে বসবাসকারী পরিবার এর ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ইউনিয়নের গুণগুনিয়া বেতাগী, গ্াড় বাড়ী, আবুল বশর বাড়ি , মাস্টার গাড়া ফিনিঙ্গা খালের মুখ এলাকার ভাঙ্গনের মুখে শত শত বাড়ি অবস্থান করছে। কমপক্ষে গত ৫ দিনে টানা বৃষ্টিতে নদীর পাড়ে বসবাসকারী ১০টি ঘর রাক্ষুসী কর্ণফুলী নদীর পেটে চলে যায়। প্রতি মুহুর্তে পানির স্রোতে ঘর বাড়ি হারাচ্ছেন এলাকার অসহায় পরিবার।
বন্যায় ডুবে যাওয়া পুকুর থেকে মাছ ভেসে গেছে। সবজিখেত নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার কয়েকটি জায়গায় পানি নেমে গেলেও শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত গুমাই বিলের রোপা আমন ধান খেত পানির নিচে। আরও কয়েক দিন পানি থাকলে আমন চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ধামাইরহাট-রাজারহাট সড়কে বন্যার পানিতে গোলাম মোহাম্মদ জামে মসজিদ সংলগ্ন কালভার্টের উভয় পাশে বিধ্বস্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে যান ও জনচলাচল বন্ধ হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। তবে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় সড়কের বিধ্বস্ত অংশ সংস্কার করা হয়।
গত রবিবার (২৫ আগস্ট) স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে কাজটি করানো হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হতে পারবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে স্থায়ী সংস্কারে উর্ধ্বতন মহলে তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানান উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ। পাশাপাশি পারুয়া ডিসি সড়কেও সংস্কার কাজ চালানো হয়েছে, ইসলামপুরেও বিধ্বস্ত অংশে সংস্কার কাজ চালানো হবে বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারল আলম।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাবুল কান্তি চাকমা বলেন, প্রাথমিকভাবে কয়েকটি ইউনিয়নের ৪০টি কাঁচা বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ পরিবারকে দুই টন চাল, শুকনা খাবার ও খাবার স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। পুরো উপজেলা ও পৌর এলাকার ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে একটু সময় লাগবে।
উপজেলা প্রকৌশলী দিদারুল আলম বলেন, উপজেলার একটি মূল সড়কসহ অভ্যন্তরীণ অন্তত ১৫টি সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে বালুর বস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, দেশের শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত গুমাই বিলের ৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে ডুবে গেছে। তবে এবার বেশির ভাগই বন্যা সহনশীল জাতের চারা লাগানো হয়েছে। এক সপ্তাহের বেশি পানি থাকলেও এসব চারার কোনো ক্ষতি হবে না। বিল থেকে পানি যাতে দ্রুত নেমে যায়, সে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারকে শুকনা খাবারের পাশাপাশি চাল দিয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দিলে এই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া কোনো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এসব ঘর মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।