রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধভাবে মাটি কেটে খালের গতি পরিবর্তন

2

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় খালের গতিপথ পরিবর্তন করে দফায় দফায় গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইটভাটায়। খালের পাড়ের একাধিক ফসলি জমির মাটিও কেটে নেয়া হয়েছে একইভাবে। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাগড়া খালের আধার মার টেক কালিপুর এলাকায় গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।
এছাড়াও পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ৮ থেকে ১০ কানি ফসলি জমিও কেটে গভীর খাদে পরিণত করা হয়েছে। খাল ও ফসলি জমি স্কেভেটরের সাহায্যে কেটে মাটিগুলো ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। নদী-নালা, খাল-বিল থেকে সরকারি অনুমতি ছাড়া মাটি কাটায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চিহ্নিতরা এর কোনো তোয়াক্কা না করে এমন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালের পাড়ে কৃষক রফিকের মালিকানাধীন এক কানি, খাল এবং রাস্তাসহ আরও দুই কানি জমির মাটি কেটে নিয়ে যায়। এতে ঘাগড়া খালের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়। পাশের কেবিএম-২ ইটভাটার মালিক মহসিন, বখতিয়ার এবং এখতিয়ার গং এসব খালের জমিগুলো কেটে মাটিগুলো নিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা। এছাড়া পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম নিশ্চিন্তাপুর পশ্চিম বিলে বিবিসি-২ ইটভাটায় ফসলি জমি গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। দুটি প্লটে প্রায় ১০ কানি জায়গা গভীর করে কাটা হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড গাবতল খেলার মাঠ এলাকায় প্রাচীর নির্মাণ করে দখল প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। ত্রিপল দিয়ে ঘিরে লোকচক্ষুর আড়ালে এসব কাজ করেছে স্থানীয় আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি। ঘাগড়া খালের পাড়ে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী কৃষক মোহাম্মদ রফিক বলেন, ঘাগড়া খালের পাড়ে সড়কের পাড়সহ মালিকানাধীন তার এক কানি জায়গা ২০২১ সালে প্রথমবার ৩০ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে যায়। এবছর আবারও ২৯ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে গেছে। ঘাগড়া খাল কেটে তার জমিনের দিকে দিক পরিবর্তন করে দেয়। ওই জমিতে তার বেগুন ক্ষেত, শসা ক্ষেত, কাকড়ল, চারপাশে কলা বাগান ছিলো। সব কেটে কেবিএম-২ নামক ইটভাটায় নিয়ে যায়। এছাড়া সিবিএম ইটভাটার সামনে এক কানি জায়গা ৩০ ফুট গভীর করে কেটে নিয়ে যায়। এই জায়গার ব্যাপারে ২০২২ সালে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে চেয়ারম্যান ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায় দেন। কিন্তু তারা তা অমান্য করে। এরপর ২০২৪ সালে আবারও সিবিএম এবং কেবিএম ইটভাটায় মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন। এই ব্যাপারে থানায় বৈঠক হলেও সুবিচার পাননি তিনি। এর প্রতিবাদ করায় তাকে চাঁদাবাজি, ভাঙচুর ও হত্যা মামলার আসামি করে।
আমির হামজা নামে এক কৃষক বলেন, তিনি এবার দেড় কানি জায়গায় আবাদ করেন। কিন্তু জোরপূর্বক তার ধান কেটে নেয়ার আগেও অন্তত এক কানি জায়গার ধান কেটে নিয়ে যায়। এসব মাটি বিবিসি-২ এবং কেবিএম ইটভাটায় নিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
ইটভাটার মালিক আহাম্মদ হোসেন বলেন, গভীর করে মাটি কাটার কারণে তাদের অফিস ভেঙে যায়। এছাড়া সড়কও ভেঙে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। এছাড়া রাজ্জাক আলী সড়ক কেটে নেয়ায় গতদীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চলাচল বন্ধ। এই সড়ক দিয়ে বাছুর মোহাম্মদ পাড়া থেকে কালিপুর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং এখন সড়কের উপরই বিবিসি-২ ইটভাটা স্থাপন করা হয়।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, তার ৬২ শতক জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে বেপরোয়া মাটি কাটার কারণে তার ধানি জমিসহ ভেঙে পড়েছে খাদে। পাশের জমির মালিক থেকে জায়গার মাটি কিনে এমনভাবে কেটেছে, তার অবিক্রিত ১০ শতক জমি ভেঙে পড়েছে। একইভাবে অন্য আরও একাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবার জমিগুলো এভাবে ভেঙে পড়লে তাদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন, তাই কৌশলে তারা এ কাজ করেছে বলে তিনি দাবি করেন।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত বখতিয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কারো জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়নি। জমির মালিকের কাছ থেকে মাটি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে’।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। অবৈধ মাটি কাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে’।