রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে ১০ মোবাইল টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন

2

রাঙামাটি প্রতিনিধি

পার্বত্য চট্টগ্রামে আবারও মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারসহ বিদ্যুৎ লাইনে তান্ডব চালিয়েছে পাহাড়ের সন্ত্রাসীরা। চাঁদা না পেয়ে রাঙামাটিতে ৪টি ও খাগড়াছড়িতে ৬টিসহ মোট ১০টি মোবাইল টাওয়ারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তারা। এতে দুই জেলার লাখো মানুষ মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ও ছনখোলা এলাকায় ৪টি টাওয়ার। পাশাপাশি খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার ঝাড়ুলছড়ি, বড়াদম, সাধনাটিলা, বাঘাইছড়ি মূখ, কার্বারি পাড়া এলাকায় ৫টি ও মানিকছড়ি উপজেলায় ১ টিসহ মোট ১০টি টাওয়ারে হামলা চালিয়ে ক্যাবল তার কেটে দিয়ে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয় সন্ত্রাসীরা। সময় সার্ভার রুম, মিটার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি ভাঙচুর করা হয়েছে।
এর আগেও গত ২২ জানুয়ারি ভোরে একই কায়দায় দুর্বৃত্তরা মোবাইল টাওয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিল। পরবর্তীতে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে মোবাইল টাওয়ার সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হলেও সপ্তাহের মধ্যেই সমস্ত টাওয়ারে আবারও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মিটার ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। এতে ওইসব এলাকার নেটওয়ার্ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়াসহ নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে স্থানীয় জনগণ।
এসব ঘটনায় স্থানীয়ভাবে পাহাড়ি আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফের সম্পৃক্ততার কথা শোনা গেলেও, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ দেয়নি। এমনকি ক্যামেরার সামনে কথা বলতেও অপরাগতা জানান মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
তবে, স্থানীয় লোকজন বলছেন, চাঁদার দাবিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনায় শুধু মোবাইল নেটওয়ার্ক নয়, পুরো এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
রাঙামাটির নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজির আলম বলেন, এঘটনা আমরা লোকজনের মুখে মুখে শুনেছি। পুরো ঘটনার বিষয়বস্তু জানতে একাধিকবার মোবাইল টাওয়ারের লোকজনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই ব্যাপারে কেউ কথা বলতে চাচ্ছেন না। থানায়ও কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি।
স্থানীয়রা বলছেন, এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চললেও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শক্ত হাতে পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও বাড়তে পারে।
স্থানীয়রা আরো বলেন, সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযানের দাবি জানাচ্ছি যাতে পাহাড়ি অঞ্চলে সাধারণ মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে এবং স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার হয়।
পাহাড়ে চাঁদাবাজি নতুন কোনো ইস্যু নয়। প্রতি বছর তিন পার্বত্য জেলায় ৩-৪শ’ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করা হয়। ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক নির্মাণকালে এবং হাঁস মুরগী, গরু-ছাগল, কলা, কাঁঠাল, আনারসসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ি ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে এসব চাঁদা নেয় পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলো। সাধারণ মানুষের দাবি- পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক কোনো দলই থাকতে পারবে না। এখনই পাহাড়ে তথা তিন পার্বত্য জেলায় সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খল বাহিনীর চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা অতিব জরুরি।