রাঙামাটির ৫ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

2

রাঙামাটি প্রতিনিধি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ও বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টিপাত ও ছোট খাটো পাহাড়ধস। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯১ মিলিমিটার। ফলে একদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে পাহাড়ধসের শংকা, অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হচ্ছে জেলার ৫টি উপজেলা। বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও কাউখালীতে বন্যায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এভাবে বৃষ্টিপাত হলে জেলার নিম্নাঞ্চলের উপজেলাগুলোর বাড়ি ঘর ছেড়ে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে হবে। এই মৌসুমের ফসলাদি ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়ছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা।
এদিকে রাঙামাটিতে টানা বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়তে শুরু করেছে। আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলা সদরসহ জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, কাউখালী ও বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বাড়তে শুরু করেছে পানি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুরো জেলায় মোট ২৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব ধরনের সতর্ক এলার্ট জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী মজুত রাখা রয়েছে। একইসাথে জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম ও কাপ্তাই সড়কের একাধিক স্থানে আংশিক ধস নামলেও দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে জুরাছড়ির ধামাইপাড়া-বড়ইতলী এবং কাউখালী-ঘিলাছড়ি রোডে সড়ক ধসে সদর উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানা যায়। একই সাথে টানা বর্ষণে পাহাড় ধসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌর এলাকায় পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা দেড় শতাধিক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রশাসন থেকে বার বার বলা হচ্ছে পাহাড়ের পাদদেশে যেন কেউ বসবাস না করে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। তারপরও লোকজন বাড়ি-ঘর ছেড়ে যাচ্ছে না।
রাঙামাটি জেলা রোভার স্কাউটস কমিশনার ও প্রতিবন্ধী স্কুলের নির্বাহী পরিচালক নুরুল আবছার বলেন, জেলা প্রশাসক ও পৌর প্রশাসন লোকজন জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সবাইকে নিরাপদে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু মানুষ তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে রাজি না। আমরা বার বার অনুরোধ করেছি নিরাপদ স্থানে চলে যেতে। তারপরও মানুষ যাচ্ছে না।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে জেলার ৫ উপজেলায় ১৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ৬ গ্রামে ঘরবাড়ি ডুবে ২ শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত রবিবার থেকে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের সম্ভাবনাময় এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক। এসময় তিনি জানান, জেলায় সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একইসাথে তিনি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানরত বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসার আহবান জানান।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ মারুফ বলেন, জেলা সদরের অবস্থা একটু উন্নতির দিকে। তবে জেলার ৫ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যে সব উপজেলা প্লাবিত হয়েছে ওই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত উপজেলাগুলোতে আশ্রায়িতদের জন্য জরুরি সেবা চালু করা হয়েছে। জেলার সব কয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বন্যায় প্লাবিত কেউ যেন কোন ধরনের কষ্ট না পায়। জেলা প্রশাসনের প্রচুর খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে।
গত ২৮ মে থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে জেলার পাহাড়ি এলাকায় ধসের আশংকা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে নিম্নাঞ্চলের পানি। এদিকে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। বন্যার শ্রোতে একজন মারা যাওয়ার পাওয়া গেছে। তবে নাম জানা সম্ভব হয়নি। এদিকে টানা বর্ষণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বাড়তে থাকলে প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা রয়েছে।