’রাঙামাটিতে সড়ক মেরামত কাজের নামে ‘হরিলুট’ হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অথচ পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন সড়কের স্থায়ী মেরামত নেই। কেবল সাময়িক ও জরুরি মেরামত কাজে ব্যয় করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কাজ স্থায়ী না হওয়ায় এসব টাকা অপচয় হচ্ছে। এছাড়া মেরামত কাজের বেশিরভাগই গাছের খুঁটির (স্থানীয় ভাষায় বল্লি) প্যালাসাইডিং। এসব কাজে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা ব্যয় হয় না। সিংহভাগ লুটপাট হচ্ছে বলে জানা গেছে।
দেখা গেছে, রাঙামাটি-চট্টগ্রামসহ জেলার বিভিন্ন সড়ক মেমরামত কাজে কিছু জায়গায় ড্রেন ও রিটেইনিং ওয়াল করা হলেও সেগুলো স্থায়ী নয়। ওইসব ড্রেন ও রিটেইনিং ওয়াল করা হয় কেবল নামে। কার্যত গাছের খুঁটির প্যালাসাইডিং আর মাটির বস্তার বাঁধ ছাড়া অন্য কাজগুলো দৃশ্যমান নয়। আর এসব কাজ পায় নির্দিষ্ট কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেগুলোও জেলার স্থানীয় নয়। ফলে এসব সড়ক মেরামত কাজে উঠছে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ।
জানা যায়, ২০১৭ সালে ভারি বর্ষণে পাহাড়ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, ঘাগড়া-বড়ইছড়ি-চন্দ্রঘোনা-বান্দরবান, বাঙালহালি-রাজস্থলী, রাঙামাটি-মানিকছড়ি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি, বগাছড়ি-নানিয়ারচর-লংগদু এবং ঘাগড়া-রাণিরহাট-কাউখালীসহ অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থানে সাময়িক ও জরুরি মেরামত কাজ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ওইসব কাজে ব্যয় বরাদ্দ ছিল প্রায় ৬ কোটি টাকা। এরপর গত বছর বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত ওইসব সড়ক মেরামত কাজে আবার ৬ কোটি টাকার জরুরি কাজ হয়। এবার বর্ষণেও ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক মেরামত কাজে জরুরি কাজ চলছে।
এছাড়া আসামবস্তি-কাপ্তাই সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে মেরামত কাজ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এসব সড়ক মেরামত কাজে গাছের খুঁটি গেড়ে প্যালাইডিং আর মাটির বস্তায় বাঁধ দেয়া ছাড়া অন্য কাজগুলোর দৃশ্যমান নেই। কিছু দিন যেতেই ভেঙে যায় এসব গাছের খুঁটি। স্থায়ী মেরামতের প্রস্তাবনা থাকলেও গত দুই বছরেও তা হয়নি। ফলে বছর বছর এসব সড়ক মেরামতের নামে ব্যয় করা সরকারের কোটি টাকা অপচয় হচ্ছে বলে মন্তব্য বিভিন্ন মহলের।
সূত্র মতে, বছর বছর ওইসব সড়ক মেরামত কাজে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও বাস্তবে অর্ধেক টাকাও ব্যয় করা হয় না। সিংহভাগ অর্থ লুটপাট হয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের পকেটে। আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজগুলো পায় নির্দিষ্ট কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হল চট্টগ্রামের ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স, ঢাকার এমএম বিল্ডার্স, কুমিল্লার রানা বিল্ডার্স ও খাগড়াছড়ির এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা।
অভিযোগ, ওইসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সরাসরি গিয়ে কাজ করেন না। তাদের নামে স্থানীয় কতিপয় ঠিকাদার কাজ করে থাকেন। তবে সশরীরে উপস্থিত থেকে স্ট্যাম্পে চুক্তি সম্পাদনের বাধ্যবাধকতা থাকায় ওইসব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক নিজে এসে কাজ করেন কি? এমন প্রশ্নে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা সরাসরি গিয়ে কাজ করেন।
এদিকে দেখা গেছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় সড়কের ৫৩ ও ৫৫ কিলোমিটারে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল স্থাপন ও ড্রেন নির্মাণসহ গাছের খুঁটির প্যালাসাইডিং কাজে ৪৫ লাখ টাকা, ঘাগড়া-চন্দ্রঘোনা-বান্দরবান সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থানে ড্রেন নির্মাণ কাজে ৪০ লাখ টাকা এবং একই সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থানে ধারক দেয়াল নির্মাণ ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ কাজে ৫৫ লাখ টাকার বরাদ্দে মেরামত কাজ করা হয়। শুধু এ তিনটি গ্রæপের কাজে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বাস্তবে অর্ধেক টাকা খরচ হয়নি। অথচ জুন ক্লোজিংয়ে কাগজে কলমে বাস্তবায়ন সম্পন্ন দেখিয়ে সব টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মো. ফয়সাল জানান, এবার বর্ষায় ভাঙনরোধে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী মেরামত কাজ চলছে। এর আগে গত অর্থবছরে ওইসব সড়কে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার মেরামত কাজ করা হয়েছিল। ওইসব কাজের মধ্যে ছিল কালভার্ট ও ড্রেন নির্মাণসহ দেড় মিটার-তিন রাস্তা মেরামত। প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ কম ছিল। ওইসব সড়কে স্থায়ী কাজ হওয়া দরকার। মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো আছে। সবগুলো সড়কের স্থায়ী মেরামত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প বিবেচনাধীন রয়েছে। অনুমোদন নভেম্বর-ডিসেম্বরে হতে পারে। আগের কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা আমি বলতে পারব না। তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তা বলতে পারবেন।