এম কামাল উদ্দিন, রাঙামাটি
গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রাঙামাটির সহিংসতার ঘটনার পর থেকে রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন জেলার পর্যটনখাত সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে রাঙামাটিতে পর্যটক শূন্যতা বিরাজ করছে।
এর আগে জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির অস্থিরতা, সাম্প্রতিক বন্যার পর সবশেষ সহিংসতার ঘটনার পর এই চরম ক্ষতির কথা জানিয়েছেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা।
ঘটনার পর গত এক সপ্তাহ ধরে রাঙামাটি সদর ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকসহ জেলার প্রায় সবক’টি পর্যটন স্পট পর্যটক শূন্য হয়ে পড়ে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ডাকা তিন পার্বত্য জেলায় ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘন্টার অবরোধের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাজেকে ঘুরতে গিয়ে সেখানে চারদিন ধরে আটকা পড়ে ছিলেন প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। এতে ভ্রমণ পিপাসু লোকজনকে নিরুৎসাহিত করে বলে জানা গেছে।এরপর অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে প্রথমে বুধবার থেকে শুক্রবার এবং পরে তা বাড়িয়ে শনিবার থেকে আরও তিনদিনের জন্য সাজেক ভ্রমণে বিরত থাকতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। ফলে ওই ঘটনার পর গত এক সপ্তাহ ধরে সদর ও সাজেকসহ রাঙামাটিতে পর্যটকের আগমণ ঘটেনি।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে যে হত্যার ঘটনা ঘটে তাকে কেন্দ্র করে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাাঙালি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এতে পর্যটনসহ পার্বত্য জেলার সার্বিক পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। সেই মো. মামুন হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয়ের ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। হত্যার পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে নিহত মামুনের স্ত্রী মুক্তা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে জানান খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আবদুল বাতেন মৃধা।
ওই মামলার আসামিরা হলেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দিদারুল আলম, খাগড়াছড়ির সাবেক পৌর মেয়র মো. রফিকুল আলম এবং স্থানীয় মো. শাকিলসহ অজ্ঞাতরা। ওই ঘটনায় উদ্ভট পাহাড়ে জনমনে ভয়ভীতি এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, বর্তমানে পাহাড়ের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে পার্বত্য জেলার পর্যটন মৌসুম পুরোদমে শুরু করেছে। পর্যটকদের জন্য এখানকার প্রকৃতি মেলেছে উদারতার হাত। হাতছানি দিচ্ছে ভ্রমণপিপাসু প্রকৃতিপ্রেমীদের। কিন্তু এর মধ্যেই খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও রাঙামাটিতে হঠাৎ পাহাড়ি-বাাঙালির সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা এ জেলার পর্যটনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এর আগে টানা বৃষ্টিতে নামা উজানের পানিতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী, সদর উপজেলাসহ নি¤œাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বন্যার কারণে প্রধান সড়কসহ রাস্তাঘাট ডুবে ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রাঙামাটির পর্যটনখাতে চরম লোকসান হয়েছে। এ সময়ে রাঙামাটি সদরের সরকারি পর্যটন মোটেলের মনোরম ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যাওয়ায় পর্যটনে লোকসান তৈরি করে। এছাড়া জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখেও রাঙামাটির পর্যটনের ওপর বিরুপপ্রভাবপড়ে।
রাঙামাটি পর্যটন মোটেল ও হলিডে কমপ্লেক্সে ও নৌ-যান ঘাটের পর্যটকবাহী নৌকাচালক মো. আলমগীর বলেন, এক মাস ধরে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে আছে ঝুলন্ত সেতু। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় এবং পাহাড়ে সংঘর্ষের কারণে কোনো পর্যটক নেই। এতে আর্থিকভাবে আমরা চরম লোকসানে আছি।
রাঙামাটি পর্যটন ও হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা জানান, ২৩ আগস্ট থেকে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু পানিতে নিমজ্জিত। এখনো সেতুর পাটাতন পানিতে ডুবে আছে। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যে সেতুর পাটাতনের পানি শুকিয়ে যাবে। এতে আবারও পর্যটকরা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া চলমান পরিস্থিতির কারণে রাঙামাটির পর্যটনখাতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে তিনদিন পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে সেখানে বর্তমানে কোনো পর্যটক নেই।
অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে এ নিষেধাজ্ঞা আরও তিনদিন বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান।
রাঙামাটি আবাসিক হোটেল সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঈনউদ্দিন সেলিম জানান, গত দুই-তিনমাসে রাঙামাটিতে তেমন কোনো পর্যটকের আগমন ঘটেনি। আবাসিক হোটেলগুলোতেও বুকিং নেই। তারও পর সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা এখানকার পর্যটনখাতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করেছে। গত এক সপ্তাহে এখানে কোনো পর্যটক নেই। এতে শুধু গত এক সপ্তাহে রাঙামাটি শহরের পর্যটনখাতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।