রাঙামাটি প্রতিনিধি
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগ, রাঙামাটি অঞ্চলে কর্মরত বন কর্মচারী মো. সাইদুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৮ জানুয়ারি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসোইন চৌধুরী বরাবর ‘একজন সচেতন অভিযোগকারী’ উল্লেখ করে নাম-পরিচয় গোপনে রেখে একটি লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়।
তবে এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া ও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙামাটির সদর দপ্তরে কর্মরত স্টেনো-টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর ও প্রধান সহকারী সাইদুল হক।
অভিযোগে সাইদুল হকের দুর্নীতি তদন্ত এবং পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়ে বলা হয়, তদন্তে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বন বিভাগের কার্যক্রমে অবহেলার অভিযোগের প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। তিনি দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর ধরে একই কর্মস্থলে (রাঙামাটি অঞ্চল, রাঙামাটি) থেকে একচেটিয়া ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। তার দীর্ঘকালীন এ অবস্থান বন বিভাগের অভ্যন্তরে বৈষম্যমূলক পরিবেশ তৈরি করেছে। অনেক স্টাফ তার কাছে জিম্মি। তার বিরোধিতা করলে চাকরি ও বদলির ক্ষেত্রে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়।
তিনি চলাচলপাস, ভুয়া পারমিট এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায়, বদলির সময় স্টাফদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে সুবিধাজনক পোস্টিং দেওয়া এবং স্টাফদের হয়রানি করে অর্থ আদায় করেন। মাঠ পর্যায়ে প্রভাব খাটিয়ে নিলামের ভালো মানের কাঠকে নষ্ট বলে চিহ্নিত করে কম দামে বিক্রির ব্যবস্থা করেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রত্যেক নিলামে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
এছাড়া ভ্যাট সংক্রান্ত জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি আদেশ অনুযায়ী ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের নিয়ম থাকলেও তিনি তা ৫ শতাংশ দেখিয়ে নথিপত্র তৈরি করেন, যা সরকারের রাজস্বে বড় ধরনের ক্ষতি।
২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কাঠ বিক্রির মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের নথিপত্র তদন্ত করলে এমন জালিয়াতি এবং সরকারের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হবে।
তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার ব্যাংক হিসাব এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি খতিয়ে দেখলে এসব অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এছাড়া তার সহযোগীদের ভূমিকায় অফিস সহায়ক হেলাল উদ্দিনের নানা হয়রানির শিকার হন স্টাফরা। হেলাল উদ্দিন স্টাফদের ব্যক্তিগত ফাইল, যেমন চাকরি বই, জিপি এফ সংক্রান্ত নথি ঠিকঠাক করার নামে টাকা আদায় করেন। টাকা নেওয়ার পরেও কাজ সম্পন্ন না করে দীর্ঘদিন স্টাফদের ঘোরাতে থাকেন। তার এমন আচরণের কারণে স্টাফরা মানসিক এবং পেশাগতভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
তাই সাইদুল হককে অবিলম্বে রাঙামাটি অঞ্চল থেকে বদলি, দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তার ব্যাংক হিসাব এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি খতিয়ে দেখা, তার বেআইনি উপার্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, সরেজমিন তদন্ত করে তার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে অভিযোগপত্রে।
অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে মো. সাইদুল হক বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া ও মিথ্যা। কিছু স্টাফ আছে, যারা অনৈতিক সুবিধা নিতে চায়, মূলত তারাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক ভুয়া অভিযোগ দিচ্ছে। এর আগেও আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের ভুয়া ও মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ ধরনের অভিযোগের অনুলিপি এখনও হাতে পাইনি। তাছাড়া আমি এখন অফিসের বাইরে। অফিসে গেলে জানতে পারব।