রাখাইনে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে চলছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ

11

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংঘি লি অভিযোগ করেছেন, ইন্টারনেট বন্ধ রেখে মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। রেডিও ফ্রি এশিয়াকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেছেন, রাখাইনের গ্রামগুলোতে সম্প্রতি নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ২২ জুন রাখাইনে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়ার খবর জানায় মিয়ানমারের এক শীর্ষ টেলিকম কোম্পানি।
সম্প্রতি রাখাইনে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সশস্ত্র যুদ্ধ চলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার তথ্যানুযায়ী, গত নভেম্বর থেকে দু’পক্ষের লড়াইয়ের কারণে রাখাইনের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং প্রতিবেশী চিন রাজ্যের হাজার হাজার লোক বাস্তুচ্যূত হয়েছে। ২২ জুন শনিবার মিয়ানমারের শীর্ষস্থানীয় অপারেটর টেলিনর গ্রপের বিবৃতির সূত্রে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ সংঘাত কবলিত রাখাইনে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার পর তা কার্যকর করেছে টেলিকম কোম্পানিগুলো। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
ইয়াংঘি লি রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেছেন, এবার প্রথমবারের মতো মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। ২০১৬ সালে যখন রাখাইন রাজ্যে নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছিলো, তখন ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়নি। ২০১৭ সালেও (দ্বিতীয়বারের মতো নিধনযজ্ঞ চালানোর সময়) ইন্টারনেট বন্ধ হয়নি। এবার কেন তারা ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে তা আমি জানি না। নিধনযজ্ঞ চলার সময়ই আমরা বুঝে যাই, এর পরিণাম কী হতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে এরইমধ্যে আমরা যেসব খবর পেয়েছি তাহলো, সম্প্রতি গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে, তিন গ্রামবাসী মারা গেছে, অনেকে আহত হয়েছে।’
রেডিও ফ্রি এশিয়ার পক্ষ থেকে ইয়াংঘি লি’র কাছে জানতে চাওয়া হয়, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে সামরিক সংঘাতে ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি যে অভিযোগ তুলেছে তিনি তার সঙ্গে একমত কিনা। জবাবে জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেন, ‘কারা, কী কারণে এটা ঘটতে দিচ্ছে তা নিয়ে কোনও রায় আমি দিতে পারব না। কারণ, মিয়ানমারে প্রবেশের অনুমতি নেই আমার, কোনও মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।’
লি অভিযোগ করেন, রাখাইনে কোনও আন্তর্জাতিক সাংবাদিক কিংবা মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের প্রবেশের অনুমতি নেই। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার কারণে খুব সীমিত তথ্য তাদের কাছে আসছে। ‘আমি যতটুকু জানি তাহলো ইন্টারনেট বন্ধ আছে, কেউ তা বন্ধ রাখতে বলেছে এবং এখন সেখানে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চলছে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, নিরাপত্তা বাহিনী যারা কিনা এ নিধনযজ্ঞে জড়িত, তারাই অতীতের নিধনযজ্ঞগুলোতে জড়িত ছিল এবং তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে নিরাপত্তা বাহিনী যা করেছে তার জন্য তারা কোনও জবাবদিহিতার মুখোমুখি হয়নি, বলেন তিনি।