রাউজানে ১৩ মাসে ১৭ খুন, জনজীবনে আতঙ্ক

16

রাউজান প্রতিনিধি

রাউজানে একের পর এক সংঘর্ষ ও হত্যাকান্ড ঘটেই চলেছে। ১৩ মাসে মোট ১৭টি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। সবশেষ গত শুক্রবার দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে যুবদল কর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলম (৪৫) নিহত হন।
জানা গেছে, রাতের আঁধারে ৮/১০ জন অস্ত্রধারী কবরস্থানে অবস্থান নিয়ে আলমগীরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আলমগীর যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
নিহত আলমগীর আগে থেকেই নিজের জীবনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চলতি বছরের ১৩ জুন এলাকায় চুরি-ডাকাতির প্রতিবাদে মানববন্ধনে তিনি কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকির অভিযোগ আনেন। ওইদিনই প্রতিপক্ষ গ্রুপও পাল্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
এদিকে রাউজান থানা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ১৭ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন রাজনৈতিক হত্যার শিকার। এসব ঘটনায় প্রায় ৩৫০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। তবে আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা খুবই কম বলে অভিযোগ করেছেন নিহতদের পরিবারগুলো। সংঘটিত হত্যাকান্ডগুলোর মধ্যে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট পিটিয়ে হত্যা করা হয় আব্দুল মান্নানকে। ১ সেপ্টেম্বর নিহত হন মো. ইউসুফ মিয়া। ২৯ অক্টোবর গুলি করে হত্যা করা হয় আজম খানকে। ১১ নভেম্বর পাওয়া যায় আবু তাহেরের লাশ। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে। ১৯ ফেব্রুয়ারি পিটিয়ে হত্যা করা হয় মুহাম্মদ হাসানকে। ১৫ মার্চ ছুরিকাঘাতে খুন হন কমরউদ্দিন জিতু। ২১ মার্চ পিটিয়ে হত্যা করা হয় মো. রুবেলকে। ৪ এপ্রিল খুন হন প্রকৌশলী নূর আলম বকুল। ১৭ এপ্রিল উদ্ধার করা হয় মো. জাফরের লাশ। ১৯ এপ্রিল রাতে গুলি ও চাপাতির আঘাতে হত্যা করা হয় আবদুল্লাহ মানিককে। ২২ এপ্রিল দোকানে ডেকে এনে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় ইব্রাহিমকে। ৬ জুলাই স্ত্রী-কন্যার সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় মো. সেলিম উদ্দিনকে। ৭ অক্টোবর মোটরসাইকেলযোগে এসে গুলি করে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমকে। সর্বশেষ ২৫ অক্টোবর দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হন যুবদলকর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলম (৪৫)।
সূত্রে জানা গেছে, এসব হত্যাকান্ডের বেশিরভাগই সংঘটিত হয়েছে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির আহব্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীদের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই থেকেই এসব সংঘর্ষ ও হত্যাকান্ড। দ্বন্দ্বের পেছনে রয়েছে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা, কর্ণফুলী ও হালদা নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা, বালুমহাল, ইটভাটা, মাটি-বালু সরবরাহের ঠিকাদারি ও পাহাড়ি সীমান্ত এলাকায় কাঠ-মদ চোরাচালান ও অস্ত্র পাচারের নিয়ন্ত্রণ।
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রাউজানে হত্যাকান্ড বেড়েছে। অনেক হত্যাকান্ড পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হচ্ছে। অন্যান্য অপরাধ প্রতিরোধ করা যতটা সহজ, হত্যাকান্ড প্রতিরোধ ততটা সহজ নয়। তবে প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।