রাউজানে আবারও যুবদলকর্মী খুন

7

রাউজান প্রতিনিধি

রাউজানে যুবদলকর্মীকে হত্যার ৩ দিনের মধ্যে আরেক যুবদলকর্মী দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাউজান সদর ইউনিয়নের পূর্ব রাউজান ৮ নম্বর ওয়ার্ডের গাজী পাড়ায় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত যুবদলকর্মীর নাম মো. ইব্রাহীম (৩০)।
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, দুপুরে কয়েকটি অটোরিকশায় করে দুর্বৃত্তরা গাজীপাড়ায় গিয়ে ইব্রাহীমের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। এসময় দুর্বৃত্তরা আরও কিছু ফাঁকা গুলি ছুড়লে একজন আহত হন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, নিহত ইব্রাহীম এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন, পরে যুবদল করতেন।
এর আগে গত শনিবার গভীর রাতে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীবউল্লাহ শাহ পাড়ায় ঘরে ঢুকে মানিক আব্দুল্লাহ নামে এক যুবদলকর্মীকে মুখে ও পায়ে গুলি করে খুন করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আধিপাত্য বিস্তার নিয়ে ঘুম থেকে স্থানীয় বাজারে ডেকে নিয়ে মো. ইব্রাহিমকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপ। তিনি গাজী পাড়ার মো. আলমের পুত্র।
অন্যদিকে দুর্র্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে চলে যাওয়ার সময় কদলপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদার বাড়ির আবুল কালামের ঘরে ভাঙচুর চালায়। এ সময় তার ছেলে মন্নানকে না পেয়ে তার ভাই সিএনজি চালক মো. নাঈমকে (৩২) পায়ে এবং হাঁটুতে গুলি করে।
এদিকে গত ২৮ আগস্ট থেকে এই নিয়ে রাউজানে ১১টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৮টি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৮ আগস্ট প্রথম হত্যাকান্ড হয়। ওইদিন বিকালে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরী মার্কেট এলাকায় আব্দুল মান্নান (২৭) নামে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার কাউখালীর বেতবুনিয়া ইউনিয়নের শ্রমিক লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি বেতবুনিয়া সুগারমিল ডাকবাংলো এলাকার কবির আহাম্মদের ছেলে।
১ সেপ্টম্বর সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বাগান বাড়ি থেকে মো. ইউসুফ মিয়া (৬৫) নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। নিহত ইউসূফ রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল শুক্কুর মিয়ার বাড়ির প্রয়াত শামসু মিয়ার ছেলে এবং বাগান বাড়ির কর্মচারী ছিলেন।
১১ নভেম্বর নিখোঁজের তিনদিনের মাথায় চিকদাইর ইউনিয়নের কালাচাঁন চৌধুরী ব্রিজের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় চিকদাইর ইউনিয়ন ওলামা লীগের সদস্য হাফেজ মাওলানা আবু তাহের (৪৮) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
২৪ জানুয়ারি নোয়াপাড়ায় জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাওয়ার পথে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের বলি হয়ে দিনে-দুপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন মো. জাহাঙ্গীর আলম (৫০) নামের এক ব্যবসায়ী।
১৯ ফেব্রæয়ারি মুহাম্মদ হাসান (৩৫) নামে এক যুবলীগকর্মীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। নিহত হাসান নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আহমেদ হোসেন মেম্বার বাড়ির মো. বজল আহমেদ ড্রাইভারের ছেলে।
১৫ মার্চ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে কমর উদ্দিন জিতু (৩৬) নামে এক যুবদলকর্মী নিহত হন।
এছাড়া ২১ মার্চ পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বৃহত্তর হোয়ারাপাড়া এলাকার মোবারক খালের পূর্ব পাশে খোলা জমি থেকে মো. রুবেল (৩৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রেমঘটিত কারণে হত্যাকান্ডের শিকার হলেও তাকে গরু চোরের অপবাদ দিয়ে গণপিটুনী দিয়ে মারা হয়। রুবেল নগরীর বায়েজিদ থানার প্রয়াত নুরুল আলমের ছেলে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন হলদিয়া ইউনিয়নের ইয়াসিন নগর গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে পারিবারিক দ্বন্দ্বে দুই ছোট ভাইয়ের হাতে খুন হন বড় প্রকৌশলী মো. নূর আলম বকুল (৪৩)।
গত ১৭ এপ্রিল বেলা ১ টার দিকে রাউজান পাহাড়তলী ইউনিয়নের মহামুনির দীঘি থেকে মো. জাফর (৪০) নামে এক রিকশা চালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এছাড়া মাটির ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা যুবদল নেতা আনোয়ার হোসেন বাচলু, রাউজান কলেজের ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পেয়ার মুহাম্মদ বাবুসহ নোয়াপাড়ায় বেশ কয়েক সাধারণ জনতা গুলিবিদ্ধ হন। এসব ঘটনা ছাড়াও নোয়াপাড়া, উরকিরচর, বাগোয়ান, হলদিয়া, চিকদাইর, পৌরসভাসহ বেশকিছু এলাকায় বিএনপির গ্রুপিংয়ের কারণে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গত শনিবার রাতে নিজ দলের প্রতিপক্ষের গুলিতে খুন হন আবদুল্লাহ মানিক (৩৪) নামের এক যুবদল কর্মী। তিনি উপজেলার গরীব উল্লাহ পাড়ার মৃত আবদুল মোতালেবের পুত্র। সর্বশেষ গতকাল ২২ এপ্রিল খুন হন মো. ইব্রাহিম নামে যুবদলকর্মী।