আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী
আল্লাহর অবারিত রহমতের মুবারক মাস মাহে রমজান। রমজানের শেষ দশক অতি গুরুত্বপূর্ণ। নাজাতের এ দশকের বিজোড় রাতসমূহে মহাফজিলতপূর্ণ শবে কদর নিহিত রয়েছে। হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম এ রজনীর সন্ধান তথা ইবাদত বন্দেগী করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করতে হবে।
হাদীসে পাকে রয়েছে, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় শবে কদরে ইবাদত করবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী মুসলিম)।
রমজানের শেষ দশকে রসূলে পাকের ইবাদত সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, যখন রমজানের শেষ দশক আসত, তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার পরিজনকে তিনি জাগিয়ে দিতেন। অতএব আমাদের উচিত মাহে রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে নিজ জীবনের গুনাহ মাফের চেষ্টা সাধনা করা।
হাদীসে পাকে এসেছে, ওই ব্যক্তির নাক ধুলাধুসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তাঁর গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল (সুনানে তিরমিজি)। তাই অতীব গুরুত্বপূর্ণ এ রাত সমূহ তারাবী নামাজের পর কুরআন তিলাওয়াত, দুরুদ, জিকির-আজকার, তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পর আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
মাহে রমজানের গত দুই দশকের দুটি পর্ব রহমত ও মাগফিরাত আমাদের মধ্য হতে বিদায় নিয়েছে। শেষ দশক নাজাত শুরু। নাজাত অর্থ মুক্তি। গুনাহগার বান্দাদের রোজা আদায়ের মাধ্যমে গুনাহ মাফ তথা নাজাত লাভের সুসংবাদ প্রাপ্তির অতিগুরুত্বপূর্ণ পর্ব। এ দিনগুলোতে মনে প্রাণে ইবাদতে কাটিয়ে মুক্তির পয়গাম লাভ করতে হবে।
রমজান মাস চলে যাচ্ছে; আপনার গোনাহ এখনও মিটেনি, রমজান মাস চলে যাচ্ছে আপনি এখনও জাহান্নাম থেকে মুক্তির সৌভাগ্য লাভ করেননি। এর চেয়ে আফসোসের বিষয় আর কী হতে পারে!।
হাদীস বিশারদ হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী (রা.) বলেন, রমজান মাসের তিন দশক, প্রথম দশকে মহান রব মুমিনদের উপর বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। ফলে তাদের মধ্যে রোজা তারাবিহ্ আদায়ের সাহস হয় এবং ভবিষ্যতে পাবে এমন নিয়ামতগুলো অর্জনের যোগ্যতা লাভ হয়। দ্বিতীয় দশকে সমস্ত সগীরা গুণাহ ক্ষমা হয়, যা জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের উপায় বা মাধ্যম। তৃতীয় দশক রোজাদারের জান্নাতি হয়ে যাওয়ার ঘোষণা এবং তাতে প্রবেশ করার ভিসা ও পাসপোর্ট লিপিবদ্ধ করা হয়।
মাহে রমজানের বরকতময় দিনগুলো আমাদের থেকে বিদায় নিচ্ছে। একবার চিন্তা করুন আমরা আমাদের অভিষ্ট লক্ষে পৌছতে পেরেছি কী? চেষ্টা করুন এ মহিমান্বিত মাসে জাহান্নাম হতে মুক্তি প্রাপ্তদের একজন হতে। আল্লাহ পাক যেন আপনার নাম লিখে দেন নাজাত প্রাপ্ত মাকবুল বান্দাদের দফতরে। ওইসব মাকবুল বান্দা যাদের জন্য রয়েছে অবারিত কল্যাণের ঝর্ণাধারা অনন্ত সুখের আবাস জান্নাত। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন, আমিন।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, মাসিক তরজুমান