রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

2

পূর্বদেশ ডেস্ক

রমজানে দ্রব্যমূল্য ও পণ্য সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চার বিভাগের ৩১ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হয়ে এই নির্দেশ দেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটা আমার জন্য প্রথম সুযোগ ছিলো আপনাদের সঙ্গে কথা বলার। অনেক কিছু শিখলাম, অনেক বিষয়ে নিজেকে অবহিত করলাম। এটা আমাদের কাজে সহায়ক হবে। সামনেই রমজান আসছে, রমজানকে কেন্দ্র করে বাজার মূল্যের দিকে আপনারা বিশেষভাবে নজর রাখবেন। শুধু বাজার মূল্য নয়, জিনিসপত্র আনা নেওয়া আরো কীভাবে সহজ করা যায় সে বিষয়েও কাজ করবেন।
তিনি কর্মকর্তাদের নিজ নিজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, কৃষি পণ্য সংরক্ষণ, সার সরবরাহ এবং শিল্প এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন। কনফারেন্সে ১৯ জন বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ পুলিশ প্রধান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তা বক্তব্য রাখেন। বাকি চার বিভাগের ৩৩ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই ধরনের মতবিনিময় পরে অনুষ্ঠিত হবে।
নতুন বছরে শৃঙ্খলভাবে যাতে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়, সেই নির্দেশনাও মাঠ প্রশাসনকে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং সবার অধিকার নিশ্চিতের নির্দেশনাও দিয়েছেন সরকার প্রধান।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বই বিতরণ হবে, সেটা নিয়ে নানা কথা উঠবে। কেউ বই পেল না। উপরের থেকে বই বিতরণের যে ব্যবস্থা আছে- সেটা যদি প্রপার নাও হয়, বই ঠিক মতো আসেনি, কেউ পেয়েছে কেউ পায়নি; কিন্তু নিজের মতো করে, সবার সঙ্গে আলাপ করে সুন্দর শৃঙ্খলবদ্ধভাবে ঠিক করে রাখলে, জানিয়ে রাখলে- তারাও শান্ত থাকে। কিন্তু অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলে মানুষ একটু ক্ষুব্ধ হয়।
ছেলে-মেয়েরা বই পাচ্ছে না এমন উদ্বেগ থেকে অনেকের মনে দ্বন্দ্ব, অশান্তির সৃষ্টি হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেই অশান্তি নিরসনে আমাদের নিয়ম মেনে (বই বিতরণ) করতে হবে। নিয়ম মেনে দিলে মানুষ মানতে চায়, নিয়ম না থাকলে যত বিপদ। আমরা যেন নিজেরা নিয়মের ভেতরে থাকি, মানুষকেও জানাই- আমরা নিয়মের মধ্যে আছি।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন বাদে শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার যাত্রা করে। এরপর গতকালই প্রথম মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা, যাতে অংশ নেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কর্মকর্তারা।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম সফল করতে মাঠ প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনই আসল সরকার।
তিনি বলেন, ২০২৪-এর অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ধারণ করে কাজ করতে হবে। সরকারের কার্যক্রমে মানুষ যেন বুঝতে পারে পরিবর্তন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সবার অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তাই মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের মনোযোগী হতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, প্রথমবার সবার সঙ্গে বসার সুযোগ হল। সামনে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে, এগুলো যেন সুন্দরভাবে করতে পারি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের মনোবলও বাড়াতে হবে।
পুলিশের যারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত, তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বিতরণ করতে হবে।
পুলিশের মনোবল বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একটা বিষয় আমাদের প্রায় আলাপ হয় শান্তিশৃঙ্খলার বিষয়ে। পুলিশের ভ‚মিকা- তারা মনোবল হারিয়েছে, যেহেতু তাদের উপরে অনেক অভিযোগ। অভ্যুত্থানের সময় যে ভ‚মিকা তারা পালন করেছে, সেজন্য তাদের উপর মানুষের ক্ষোভ।
কাজেই তাদের মনোবল বৃদ্ধি, যারা দোষী- তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে। যারা নির্দোষ, তারা যেন নিশ্ছিদ্রভাবে ভ‚মিকা পালন করতে পারে।
গণঅভ্যুত্থানের পর পরিবর্তনের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যাতে কাজে প্রতিফলন হয়, সেই নির্দেশনাও দেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব রয়েছে, নাগরিক হিসাবেও দায়িত্ব রয়েছে; একটা বড় পটপরিবর্তন হয়েছে। বড় পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগটা যদি আমরা না বুঝি, তাহলে বোধ হয় আমরা ব্যর্থ হলাম।
এই যে পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, উপর থেকে নির্দেশনার পাশাপাশি নিজের থেকে সম্প্রসারিত করতে হবে- ‘এ পরিবর্তনটা আমরা চাই’। এটা কোনো নির্দেশের বিষয় নয়, অনুধাবন করার বিষয় আমরা এ ভঙ্গিতে কাজে প্রতিফলন করব।
ইউনূস বলেন, যেহেতু অভ্যুত্থান হয়েছে, তার মধ্যে বহু ধরনের ডিস্টার্বনেন্স সৃষ্টি হয়েছে কাজে-কর্মে। কাজেই এটা থেকে উত্তরণ করে আমাদের ফুল স্পিডে অগ্রসর হওয়ার সময় এসে গেছে।
যেহেতু বছরের শেষ অর্ধ সময় কাটালাম, নতুন বছর শুরু হচ্ছে। নতুন বছরের কর্মপ্রেরণা পূর্ণভাবে ধারণ করে আমরা কাজগুলো করব; মানুষ যেন বোঝে একটা পরিবর্তন হয়েছে।
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, মানুষ চায়- শান্তি শৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। সেটাতে আমরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছি। সব মানুষ যেন মনে করে, সরকার আমাদের অধিকার পূর্ণাঙ্গভাবে নিশ্চিত করেছে। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।