চট্টগ্রাম ওয়াসাতে যুক্ত হয়েছে আরো একটি প্রকল্পের পানি। পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প (ফেজ-২) থেকে দৈনিক ৫ কোটি লিটার পানি আসছে নগরে। নতুন প্রকল্পের পানি যুক্ত হওয়ায় ওয়াসার পানি সরবরাহ বাড়ার কথা। কিন্তু রমজানের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকায় পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ লাইনে পানির চাপ কমে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় টানা কয়েকদিন ধরে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। একদিকে গ্রীষ্মের তাপদাহ ও অন্যদিকে রোজা। এই দুইয়ে মিলে এমনিতেই বেড়েছে পানির চাহিদা। কিন্তু পানির সরবরাহ বৃদ্ধির পরিবর্তে কমেছে, বেড়েছে ভোগান্তিও।
অনেক এলাকায় রান্না ও অন্যান্য জরুরি কাজ ঠিকভাবে হচ্ছে না পানির অভাবে। কোনো কোনো এলাকায় আবার মসজিদেও পানির সংকট তৈরি হয়েছে। মুসল্লিরা অজু করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। অবশ্য বিপরীত চিত্রও আছে কিছু এলাকায়। কিছু এলাকায় নতুন করে পানি পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া কয়েকদিন ধরে ওয়াসার পাইপলাইন ফেঁটে পানি বের হলেও এখনো পর্যন্ত সেটা সংস্কার না করার মতো অভিযোগও আছে। এতে বিপুল পানি অপচয় হলেও ওয়াসা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
নগরীর মাদারবাড়ি দুই নম্বর গলি এলাকা। গত একমাস ধরে পানির চাপ কমেছে এলাকাটিতে। আগে নিয়মিত পানি পেলেও একমাস ধরে পানির চাপ একেবারে কমে গেছে। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। ওয়াসায় অভিযোগ করার পরও কোনো সুরহা মেলেনি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগে মোটামুটি পানি পেতাম। গত একমাস ধরে পানির চাপ একেবারে কমে গেছে। যে পানি পাই সেটা দিয়ে রান্নাবান্নার কাজও সারা যায় না। ওয়াসার নতুন নতুন প্রকল্প হচ্ছে শুনি, পানির চাপ বাড়ার বদলে উল্টো কমে গেছে আমাদের। ওয়াসায় অভিযোগ জানিয়েও কোনো উপকার হয়নি।
আগ্রাবাদ এলাকার যুগিচাঁদ মসজিদ লেইন এলাকায় রমজানের শুরু থেকে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সড়কটির খানবাড়ির সামনে ওয়াসার মূল পাইপলাইন ফেঁটে নিয়মিত পানি বের হচ্ছে। এলাকাবাসী বিষয়টি ওয়াসাকে অবহিত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। একদিকে নিয়মিতভাবেই প্রচুর পানির অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে এলাকার মানুষ পানি বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মামুন রাজা বলেন, যুগিচাঁদ মসজিদের খানবাড়ির সামনে ওয়াসার পাইপ লাইন ফেঁটে নিয়মিত পানি বের হচ্ছে। তিন-চারদিন ধরে পানির এমন অপচয় চলছে। ওয়াসাকে বিষয়টি জানিয়েছি, কিন্তু তারা এখনো সেটা সংস্কার করেনি। পাইপ লাইন ফেঁটে পানি বের হয়ে যাচ্ছে আর আমরা পানি পাচ্ছি না।
গত বৃহস্পতিবার থেকে পানির সংকটে আছে চান্দগাঁও এলাকাবাসী। চান্দগাঁও সিএন্ডবি বিসিক শিল্প এলাকার আফজল মাঝির বাড়ি ও বরিশাল বাজার এলাকায় পানির সংকটে সেহেরী ও ইফতারের সময় পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। বাইর থেকে পানি এনে রমজানের শুরুতে সারতে হয়েছে দৈনন্দিন প্রয়োজন।
স্থানীয় যুবক মো. নুরউদ্দীন বলেন, আফজল মাঝির বাড়ি ও বরিশাল বাজার এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। বৃহস্পতিবার থেকে এলাকায় দু’দিন পানি ছিল না। রমজান মাসে পানি না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। ইফতার ও সেহেরীর সময় পানির জন্য মানুষ এদিক-ওদিক ছুটে গেছেন।
এছাড়াও চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলীর মোহাব্বত আলী রোড, চৌধুরীপাড়ার একাংশ, বিশ্বাস পাড়া, আলিমুল্লাহ চৌধুরী বাড়ি, জাকের আলী সওদাগর বাড়ি, মুরাদচৌধুরী বাড়ি, দারোগাবাড়ি, আমানত উল্লাহ শাহ পাড়া, কুতুব বাড়ি এলাকার মানুষ ওয়াসার বিল দিলেও সেখানে পানির দেখা নেই দীর্ঘদিন। একাধিকবার জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান স্থানীয় বিশ্বাস পাড়া সমাজের সম্পাদক সাইফুদ্দীন আহমদ সাকী, কুতুববাড়ির বাসিন্দা শাহেদ আকবরসহ এলাকার বেশ কয়েকজন অধিবাসী।
এ বিষয়ে কথা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, আমাদের লাইন ডাইভার্ট করতে হচ্ছে এজন্য সামান্য সমস্যা হচ্ছে। চান্দগাঁও সিএন্ডবি এলাকায় সমস্যা ছিল সেটা সমাধান করা হয়েছে। পূর্ব মাদারবাড়িতেও সমাধান করা হয়েছে। যুগিচাঁদ মসজিদ এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় পাইপলাইনের লিকেজ হয়েছে। সেগুলো আমরা ক্রমান্বয়ে ঠিক করছি। লিকেজ ঠিক করতে গিয়ে আমরা পানির লাইন বন্ধ করছি না, যাতে মানুষ পানি পায়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন আমাদের উৎপাদন বেড়েছে, মানুষের প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে। আগে পতেঙ্গা-হালিশহর এসব এলাকায় পানি যেতো না, এখন সেখানেও পানি পাচ্ছে। একেক জায়গায় একেক প্রকল্পের পানি দেয়া হচ্ছে। লাইনগুলো পরিবর্তন করতে গিয়ে কোথাও পানির চাপ বাড়ছে আবার কোথাও কমে যাচ্ছে। আমরা সেটাকে সমান্তরালে আনার চেষ্টা করছি। তবে কোথাও পানি পাচ্ছে না- এমন অভিযোগ নেই। আগে বেশি পেত এখন কমে গেছে এমনটা হচ্ছে। সেটার সমাধান করার জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।