মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মতো উন্নত দেশসহ বিশ্বের ৯টি দেশে এবার রপ্তানি হয়েছে ২৮ হাজার টনের বেশি আলু। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু রপ্তানি হয়েছে মালয়েশিয়ায়। একই সাথে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইওয়ানে সাড়ে ৭ হাজার টন বাঁধাকপি এবং মালয়েশিয়ায় ৭৫ টন টমেটো রপ্তানি হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে শুধু সমদ্র পথেই এসব রপ্তানি হয়েছে চলতি অর্থ বছরের (২০২০-২১) ১৪ মার্চ পর্যন্ত। আলু রপ্তানি করা দেশগুলো হলো- মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, আরব আমিরাত, মালদ্বীপ, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইন ও ব্রূনাই। আর বাঁধাকপি রপ্তানি করা দেশগুলো হলো- মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ান। এছাড়া টমেটো রপ্তানি করা দেশটি হলো-মালয়েশিয়া।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে উল্লেখিত আলু, বাঁধাকপি এবং টমেটো রপ্তানির ব্যবস্থা করা হয়। দেশের রংপুর, লালমনিরহাট, চুয়াডাঙ্গাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এসব আলুর ফলন হয় বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আলুর বিষয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থ বছরের জুলাই ২০২০ থেকে ১৪ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত দেশ থেকে মোট ২৮ হাজার ৯০১ দশমিক ৩০৭ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে মালেয়েশিয়ায় ১৭ হাজার ৮২৭ দশমিক ৪৮৭ মেট্রিক টন, সিঙ্গাপুরে ১ হাজার ৪২২ দশমিক ৫৮৩ মেট্রিক টন, শ্রীলঙ্কায় ৭ হাজার ৬৪ দশমিক ২৩৭ মেট্রিক টন, আরব আমিরাতে ১ হাজার ১৩২ দশমিক ২২০ মেট্রিক টন, মালদ্বীপে ১৩৫ মেট্রিক টন, সৌদি আরবে ৭৪৩ দশমিক ৫০০ মেট্রিক টন, কাতারে ১৭৬ মেট্রিক টন, বাহরাইনে ১৫৯ দশমিক ৪৪০ মেট্রিক টন এবং ব্রæনাইয়ে ২৪০ দশমিক ৮৪০ মেট্রিক টন।
গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০২১ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত বাঁধাকপি রপ্তানি হয়েছে ৭ হাজার ৬৭৬ দশমিক ৪৮৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় ৬ হাজার ৯৩ দশমিক ৪২৩ মেট্রিক টন, সিঙ্গাপুরে ১ হাজার ১১১ দশমিক ৯০৩ মেট্রিক টন এবং থাইওয়ানে ৪৭১ দশমিক ১৬০ মেট্রিক টন। অন্যদিকে চলতি বছরের ২৫ ও ২৭ ফেব্রূয়ারি এবং ৬ মার্চ তিন চালানে মালয়েশিয়ায় টমেটো রপ্তানি হয়েছে ৭৫ টন।
জানা গেছে, বছরে ৯০ লাখ টন আলু দেশে উৎপাদন হয়। আর দেশে আলুর চাহিদা আছে ৭০ লাখ টন। বাকি আলুগুলো সরকার রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ নিয়েছে। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশে মোট দুইটি সমুদ্র বন্দর, তিনটি বিমানবন্দর, ২৪টি স্থলবন্দর, একটি নৌবন্দর ও কমলাপুরের আইসিডি’র মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে সরকার বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও কয়েকটি কোয়ারেন্টাইন স্টেশন স্থাপনের সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেছে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নাসির উদ্দিন দৈনিক পূর্বদেশকে জানান, বর্তমানে ৯টি দেশে নিয়মিত আলু রপ্তানি হচ্ছে। আগামীতে আরও কয়েকটি দেশকে যুক্ত করার ব্যাপারে সরকারিভাবে তৎপরতা চলছে। এছাড়া এবার টমেটো রপ্তানির বিষয়টি সম্পূর্ণ ঝূঁকির মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়েছে। টমেটো রপ্তানির সময় খুব আতঙ্কে ছিলাম, কি না কি হয়। পরবর্তীতে কাঁচা টমেটো রপ্তানি করি।
তিনি আরও জানান, আমাদের দেশে আমদানি বেশি হলেও রপ্তানি খুবই কম হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষিখাতে। আমি কৃষি বিভাগের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে বৈঠক করে সিদ্ধান্তে আসি, কীভাবে আমরা রপ্তানি করতে পারি। সর্বশেষ আলুর পাশাপাশি বাঁধাকপি এবং টমেটো রপ্তানির উদ্যোগ নিই। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের কৃষক ভাইয়েরা যেন ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিষাক্ত কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার না করে। জৈব সার এবং জৈব বালাই নাশক ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করলে রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশীয় সুনাম অক্ষুণ্ণ থাকবে। এছাড়া কৃষক যদি সচেতন থাকে, তবে উৎপাদন এবং রপ্তানির মাত্রা দিন দিন বাড়বে।
উল্লেখ্য, দেশে ১৯৯৮ সালে এটিডিপি (এ্যাগ্রোবেজ্ড টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) একটি মার্কেটিং মিশন বাংলাদেশ থেকে সিংঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ফ্রেশ আলু রপ্তানির সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং ১৯৯৯ সালে এটিডিপির উদ্যোগে প্রথম ১২৬ টন আলু রপ্তানি করা হয়। ২০০৫, ২০০৬ সালে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আলু রপ্তানি করা হয়। ২০০৭ সালে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার টনে। ২০১১ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭টি প্রাইভেট কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার টন আলু রপ্তানি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।