মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী
আকাশচুম্বী অট্টালিকার সারি, চারপাশে সবুজ প্রকৃতি। রাস্তার দু’ধারে সবুজ গাছ গাছালি, পাহাড় টিলা পর্বত। রাস্তার আইল্যান্ডে ফুল ও বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ। দেশের প্রতি গভীর দেশপ্রেমের কারণে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সবুজ প্রকৃতিকে এতটুকু ক্ষতি করেনি। যে দিকেই দেখা যায় দু’চোখ জুড়িয়ে যায় সবুজের সমারোহ দেখে। বলছি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, ফেনাং শহরের কথা। আর আমরা আমাদের দেশে সবুজ প্রকৃতি ধ্বংসের ধ্বংসাত্মক আগ্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছি। সংরক্ষিত বা অসংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে, পাহাড় টিলা কেটে সমতল করে অট্টালিকা গড়ে উঠছে, পাহাড় ন্যাড়া করা হচ্ছে অহরহ। খাল বিল ঝিল মাঠ সবুজ প্রান্তরেও গড়ে উঠছে আবাসান প্রকল্প এবং শিল্প ও কল-কারখানা। নদী, নালা দখল করে ঘর বাড়ি, দোকান-পাট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকৃতির ওপর মানুষের নির্দয় নিষ্ঠুর দখলদারিত্বের আগ্রাসন চলছে শহরে মফস্বলে গ্রাম-গঞ্জে পর্যন্ত। ফলশ্রুতিতে দেশের পরিবেশ প্রতিবেশ প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জীব জন্তু জলজ প্রাণী কীট পতঙ্গ এবং জীব বৈচিত্র্যেও দেখা দিয়েছে বহুমাত্রিক সংকট। গভীর জংগলের জীব জন্তু পাখি কীটপতংগের অভয়ারণ্য ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে হাতির অভয়ারণ্য সংকোচন এবং খাদ্য সংকটের কারণে হাতির পাল জনপদে নেমে এসে তান্ডব চালাচ্ছে। মানুষের কৃষিজমি ঘরবাড়িতে এবং মানুষকে আক্রমণ করছে। এতে হাতি পদদলিত করে মানুষের অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু ঘটাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে হাতি মানুষকে তার প্রতিপক্ষ মনে করছে। পাশাপাশি দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। খরা অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করার ফলে প্রকৃতি বিরূপ ও রূদ্র মূর্তিরূপ ধারণ করছে। অন্যদিকে মাটির গভীরে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে গিয়ে গভীর এবং অগভীর নলকুপে পানির সংকটের কারণে জন-জীবনে দুর্ভোগ দুর্দশার সৃষ্টি হচ্ছে।
কুয়ালামাপুর, ফেনাং এ যানজট আছে তবে তা অসহনীয় যন্ত্রণাদায়ক অস্বস্তিমুলক বা দুর্ভোগ দুর্দশার কারণ হয়ে উঠে না। কেননা এখানে কেউ এলোমেলোভাবে যানবাহন চালায় না। এমনকি একটা হরণের শব্দ পর্যন্ত শোনা যায় না। বায়ু দূষণ শব্দ ও দূষণের যন্ত্রণা এবং অভিশাপ নেই বল্লেই চলে। আমাদের দেশের যানবাহনগুলো কোনো নিয়ম নীতি বা বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা করে না। যত্রতত্র বিকট এবং নানান শব্দের হরণ এমনকি হাইড্রোলিক হরণ, পুলিশ এম্বুল্যান্সের হরণ বাজানো হয়।
হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর এবং নীরব এলাকায় পর্যন্ত যানবাহনের হরণের শব্দ দূষণের জ্বালায় জন জীবন অতিষ্ঠ বিভিষীকাময় হয়ে উঠে। পাশাপাশি আছে অত্যধিক বায়ু দূষণ। শব্দ ও বায়ুদূষণের কারণে মানুষ বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণরা প্রচন্ড শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, সড়কে বাংলাদেশের মতো বিশৃঙ্খলা নৈরাজ্য অরাজকতা আর কোথাও নেই।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ‘মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। মালয়েশিয়ার জনসংখ্যাত ৩ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি, ফলে এটি বিশ্বের ৪৩তম সর্বাধিক জনবহুল দেশ। ১ লক্ষ ৯২ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের অতিবৃষ্টি অরণ্যের অধিকারী (যা দেশের আয়তনের অর্ধেকেরও বেশি) মালয়েশিয়া বিশ্বের ১৭টি মহাবিচিত্র দেশগুলির একটি; এখানে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় বন্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে। ড. মাহাথির মোহাম্মদ (জন্ম জুলাই ১০, ১৯২৫) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রি ও আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি। তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দল পর পর পাঁচবার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তিনি এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতা অর্জনের ৫৩ বছর পরেও বাংলাদেশ তার কাংখিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে দেশের রাজনীতিবিদদের অন্যায় অবিচার জুলুম ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতা হরণ এবং দুর্নীতিগ্রস্ততার কারণে। আইনের এবং সুশাসনের অঙ্গীকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করায়। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে কার্যকরী ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায়। উন্নয়নের নামে অযথা অহেতুক দেশের সম্পদ অর্থ লোপাট করে নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য অনেকেই বেপরোয়া হয়ে গেছে। যে কোন প্রকল্প গ্রহণের আগে এর উপযোগিতা, প্রয়োজনয়িতা, জনস্বার্থ জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে বা ব্যক্তি স্বার্থে গ্রহণ করা হলে তাতে দেশের লাভের পরিবর্তে ক্ষতিই হয়ে থাকে। আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা অর্থ লোপাট ব্যাংকিং খাত ধ্বংসের মাধ্যমে দেশকে আর্থিকভাবে পংগু করে ফেলা হয়েছে। সচিব আমলা এবং প্রশাসনের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতি এবং অনৈতিক সুযোগ সুবিধা গ্রহণ দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি দেশপ্রেমের। সঙ্গে আছে জনগণের প্রতি অসম্মান অবহেলা। আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা। প্রশাসনিক কার্যক্রমে অনৈতিক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ চাপ বলপ্রয়োগ এবং প্রভাব বিস্তার। বল্গাহীন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের লাগাম টেনে না ধরা। পাশাপাশি বারবার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রবণতা যা ৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে শুরু। পরবর্তীকালে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণ এবং দল গঠনের যাত্রা শুরু করেন। জাতির দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার পর থেকে ক্ষমতায় যাওয়ার পরে ক্ষমতাসীনরা জনগণের প্রতি দেয়া ওয়াদা অংগীকার প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে নিজেদের ক্ষমতাকে পাক-পোক্ত করার জন্যে অগণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাচারী হয়ে উঠে। দেশ ও জাতির প্রতি দেয়া ওয়াদা অংগীকার প্রতিশ্রুতি পূরণ করা না গেলে এ দেশ ও জাতির উন্নতি কখনোই সম্ভব নয়। আসুন আমরা দেশকে ভালবাসি। জনগণের সাংবিধানিক এবং নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষার অংগীকার বাস্তবায়ন করি।
সুপ্রতিষ্ঠিত করি আইনের শাসন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের গণিমতের মালকে ব্যক্তির মাল হিসেবে ব্যবহার অপচয় তছরুপ থেকে বিরত থাকা উচিৎ। একথা অনস্বীকার্য, যে জাতির স্বদেশ প্রেম নেই সে জাতির উন্নতিও নেই।
লেখক : প্রাবন্ধিক