হাজারো আহলে বায়েতপ্রেমী দ্বীনদার জনতার অংশগ্রহণে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আন্তর্জাতিক শাহদাতে কারবালা মাহফিল মুখর হয়ে উঠেছে। গতকাল শুক্রবার মাহফিলের ৮ম দিনে সভাপতিত্ব করেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, যাদের হৃদয়ে আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) ইশক মহব্বত ভালোবাসা আছে, তাদের শান-মর্যাদা উচ্চকিত করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক ও প্রিয় রাসূল (দ.)। সকল সাহাবায়ে কেরাম একেকজন আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রস্বরূপ। তাঁদের প্রতি মহব্বত ও আনুগত্যের মাধ্যমে আমরা দুনিয়া এবং আখেরাতে সাফল্য ও নাজাত পেতে পারি।
তিনি যুব সমাজের উদ্দেশে বলেন, যুব-তারুণ্যের মাঝে অসীম শক্তি, সম্ভাবনা ও প্রতিভা বিদ্যমান। অথচ তা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না। আমরা কাজকে ভালোবাসি না। ফলে আমাদের ভাগ্যও পরিবর্তন হয় না। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে অবিরত কাজে লেগে থাকতে হবে। ভাগ্যের পরিবর্তন চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও কাজ করতে হবে। কোন কাজকেই ছোট মনে করা যাবে না। তরুণরা আজ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপেক্ষা ও অবহেলার শিকার। মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাক সকল মানুষকে অসীম শক্তি ও প্রতিভা দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। মানুষের মতো শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়ে ও জ্ঞানী করে আল্লাহ পাক আর কাউকে দুনিয়াতে পাঠাননি। আল্লাহ পাকের প্রতিনিধি মানব সমাজ ও যুব সমাজ চাইলে অসাধ্য সাধন করতে পারে। অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে। অন্যায়, অসত্য, মিথ্যা ও জুলুমতন্ত্রকে প্রতিরোধে যুব সমাজ এগিয়ে আসলে দেশে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
তিনি বলেন, অবক্ষয়ের বৃত্তে বন্দি যুব-তারুণ্যকে জাতীয় সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। যুব সমাজকে জনসম্পদে পরিণত করে দেশকে ভেতর থেকে বদলে দিতে হবে। তিনি নবী দৌহিত্র জান্নাতের যুবকদের সরদার হযরত ইমাম হোসাইনকে (রা.) তারুণ্যের আদর্শ ও উজ্জীবনের প্রতীক বলে উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আল্লামা জাফর উল্লাহ বলেন, হাশরের ময়দানে প্রশংসিত স্থান তথা মকামে মাহমুদের মর্যাদা পাবেন প্রিয় নবী (দ.)। প্রিয় নবীজী (দ.) হাশরের ময়দানে বেছে বেছে গুনাহগার উম্মতকে শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। এই মর্যাদা অন্য কোন নবী রাসূলের ক্ষেত্রে ঘটবে না।
হাটহাজারী ছিপাতলী জামেয়া গাউছিয়া মুঈনীয়া কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস আল্লামা কাজী মুহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, সেদিন কারবালার ময়দানে নিরপরাধ, নিষ্পাপ ও নিরীহ নবী পরিবার ও ইমাম হোসাইনের (রা.) বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন পাষন্ড ইয়াজিদ। এখনও ইয়াজিদি দোসররা থেমে নেই। তারা ইসলামের নামে সারা বিশ্বে ত্রাস সৃষ্টি করে শান্তিপ্রিয় জনতার শান্তি স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে। এই ইয়াজিদি প্রেতাত্মাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সর্বাত্মকভাবে লড়ে যেতে হবে।
রাসুলুল্লাহর শানে নাত শরীফ : ইসলামি সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান বিষয়ে আলোচনা করেন পীরে তরিকত শাহসুফি আল্লামা মীর মুহাম্মদ মাঈনুদ্দিন নুরী সিদ্দিকী আল কুরাইশি। তিনি বলেন, শাহাদাতে কারবালা মাহফিল আজ ইসলামী কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) শান মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করেন হালিশহর মাদ্রাসায়ে তৈয়বিয়া ইসলামীয়া সুন্নিয়ার প্রভাষক আল্লামা মুহাম্মদ ইউনুচ তৈয়বী। কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী মুহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম। নাতে রাসূল (দ.) পরিবেশন করেন শায়ের মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ।
পরিচালনা পর্ষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ দিলশাদ আহমেদের নির্মিত বিগত দিনের চমৎকার একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি মাহফিলে পরিবেশিত হয়। মাহফিলে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজ রসায়ন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান গবেষক-শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড.নূ.ক.ম. আকবর হোসেন, দরবারে ইছাপুরীর শাহজাদা শাহজাদা সৈয়দ শফিউল আজম, সৈয়দ আমানুল্লাহ আহসান।
হাফেজ মাওলানা আহমদুল হক ও হাফেজ ছালামত উল্লাহর সঞ্চালনায় মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন মাহফিলের প্রধান সমন্বয়ক ও পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর আলহাজ মুহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, আলহাজ খোরশেদুর রহমান, আলহাজ মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ সাইফুদ্দীন, প্রফেসর কামাল উদ্দীন আহমদ, আব্দুল হাই মাসুম, আলহাজ দিলশাদ আহমেদ, জাফর আহমদ সাওদাগর, মাওলানা কাযী জালাল উদ্দীন, আবু সাঈদ মুহাম্মদ হামেদ, মাইনুদ্দীন মিঠু, মোহাম্মদ নাজিব আশরাফ, মুহাম্মদ আব্দুর রহমানসহ বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীন, মতোয়াল্লী ও ইমামগণ। সালাত সালাম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি এবং ফিলিস্তিনিসহ বিশে^র মজলুম মুসলমানদের নাজাত কামনায় মোনাজাত করা হয়।
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্স এর নিচ তলায় প্রতিদিন পর্দা সহকারে মহিলাদের জন্য আলোচনা শোনার ব্যবস্থা রয়েছে। আজ ৯ম দিনে মাহফিলে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। বিজ্ঞপ্তি