মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের দামামা হঠাৎ বন্ধ হওয়ার পেছনে কার ইশারা! এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বিশ্ব প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের। ইউক্রেনেও যুদ্ধের পুড়া বারুদের গন্ধ কয়দিন ধওে তেমন দেখা যাচ্ছে না, আফ্রিকার হতদরিদ্র মানুষগুলো আশায় বুক বেঁধেছে, এবার যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামনে দাঁড়াবেন। ইউরোপের বাইডেন শিবিরে ধস নামতে শুরু করেছে। বেশ কয়জন প্রধানমন্ত্রী আগে থেকে পদত্যাগ করেছেন। যুক্তরাজ্য ভেতরে ভেতরে আত্মাহুতি দেয়ার উপক্রম। এশিয়ার মোড়লদেরও ঘাম ঝরছে! তিনি শপথ নেয়ার আগেই যদি বিশ্বব্যাপী এমনটি পরিবর্তন কিংবা অবস্থা হয়ে থাকে, তবে তিনি যখন এসেই গেলেন তখন কী হতে পারে পরবর্তী অবস্থা! হ্যাঁ, তিনি এসই গেছেন। সকল জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মত বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। নির্বাচনের দুই মাস পর গত সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির ইউএস ক্যাপিটল ভবনে দেশি ও বিদেশি অতিথি-অভ্যাগতদের ভিড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের জমকালো অভিষেক অনুষ্ঠান। শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ৭৮ বছর বয়সী এই রিপাবলিকান নেতা দেশটির ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবারও হোয়াইট হাউসে পা রাখলেন। এটি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ। এর আগে ২০১৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু ২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে তিনি হেরে গিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে তিনি পুনরায় জো বাইডেনকে পরাজিত করে আবার বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছেন। বিজয়ের পর থেকেই রিপাবলিকান শিবিরে চলছে উল্লাস। অভিষেক অনুষ্ঠানে সেই উল্লাসেরই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে। বিশ্বেও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমাদেও উষ্ণ অভিনন্দন।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এক নম্বর শক্তিধর দেশ। স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সারা বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে থাকে। কিন্তু এবারের এই পরিবর্তন নানা কারণেই সারা বিশ্বের আরো বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। আরো একটি কারণে সারা দুনিয়ার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, আর তা হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দায়ের। তিনি শেষ পর্যন্ত লড়তে পারবেন কি না, তা নিয়েই সংশয় ছিল। ট্রাম্প তাঁর আগের মেয়াদে দেখিয়েছিলেন যে তিনি কেবল একজন প্রথাগত প্রেসিডেন্ট নন। তিনি সে সময় এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেগুলোর বিষয়ে অনেকে কল্পনাও করেনি। এবারও ক্ষমতায় আসার আগেই তিনি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। বিশেষ করে বড় পরিসরে ট্যারিফ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে, কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা বলে। অনেকে ধারণা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি এবং পশ্চিমা নিরাপত্তা জোট ন্যাটোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় তিনি বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিমালা সারা দুনিয়ার রাজনীতি-অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। আমরা আশা করি, সব ইতিবাচকভাবেই এগিয়ে যাবে। বিশেষ করে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, রাশিযা-ইউক্রেন যুদ্ধ, সুদান, ইয়ামেন ও সিরিয়ায় যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তির পথ খোঁজা এবং রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্টের নীতিতে পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায় । ট্রাম্প অবশ্যই বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বাগ্রে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এটি যেন শান্তি ও স্থিতিশীরতার মধ্যেই হয়-সেই প্রত্যাশাও বিশ্ববাসীর।
গত আগস্টে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নজিরবিহীন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে যে টানাপড়েন ছিল, তা কেটে গেছে বলে তখন জানিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরও সুসম্পর্কের সেই ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকবে বলেই আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক হোঁচট খাবে না। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসও বাংলাদেশের জনগণের সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার রূপরেখা প্রণয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা জানিয়েছে। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সুদীর্ঘ সময় ধরে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে, নতুন নেতৃত্বের অধীনে তা আরো জোরদার ও গতিশীল হবে। ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দুই দেশ আগের মতোই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাবে।