কর্ণফুলী প্রতিনিধি
কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত শাহ্ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় নিত্যদিনের যানজট নিরসন, যাত্রী ভোগান্তি ও জনদুর্ভোগ লাঘবে টোল প্লাজার দুই পাশে যুক্ত করা হচ্ছে আরও দুই লেন। গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে লেন দুইটির কাজ শুরু করেছে সওজ কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং চুক্তি অনুযায়ী ১৮০ দিনে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগে অর্থাৎ ঈদুল আজহার আগেই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগ (সওজ) এর উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু মুহাম্মদ ভুট্টু। লাইন দুইটি চালু হলে দুই পাশের যাতায়াতকারী লাখো যাত্রীর নিত্যদিনের যানজটের দীর্ঘ ভোগান্তি ও জনদুর্ভোগ অনেকটাই কমে আসবে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
জানা গেছে, এ প্রকল্পে ব্যয় ৪ কোটি ৯০ লাখ ৫৯ হাজার ২৫৯ টাকা ৫৬ পয়সা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, কাজটি সম্পন্ন করতে ১৮০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নোটিশ জারির তারিখ থেকে সময় কার্যকর করা হয়েছে। চলতি ফেব্রæয়ারি মাসের শুরু থেকে দুটি বুথ বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। কাজের সময়সীমা ১৮০ দিন হলেও দুর্ভোগ কমাতে আগামী ঈদুল আজহার আগেই বুথ নির্মাণের কাজ দ্রæত শেষ করতেই বেশ তোড়জোড় চলছে। এ দুই লেন চালু হলে যানজট থেকে মুক্তি পাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লাখো যাত্রী। এ সেতুর টোল প্লাজায় প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লেগে থাকে যানজট। যা টোল প্লাজা ছাড়িয়ে কখনো মইজ্জার টেক, আবার কখনো বাকলিয়া ছাড়িয়ে যেত। এ নিয়ে স¤প্রতি টোল প্লাজায় টোল আদায়কারী কর্মচারীদের বিভিন্ন সময় যাত্রীদের নানান কথাও শুনতে হচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়ছেন এ সড়কে যাতায়াতকারীরা।
টোল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিআরটিএ নতুন অটোমেশন প্রক্রিয়ায় জটিলতা, অনিবন্ধিত অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি, ভাঙতি টাকা ফেরতে সময়ক্ষেপণ ও টোল প্লাজা থেকে মইজ্জ্যারটেক চত্তরটি অতি সন্নিকট হওয়ায় এমন যানজট সৃষ্টি হয়ে থাকে।
পরিবহন চালক ও যাত্রীরা দোষ দিচ্ছেন টোল প্লাজা কর্তৃপক্ষকে। তাদের দাবি প্রশিক্ষণ ছাড়া অদক্ষ শ্রমিক দিয়ে টোল আদায় করার কারণে প্রতিদিন এ দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তারা বলছেন, দিন যত গড়াচ্ছে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় যানজট তীব্র হয়। এছাড়া প্রতিদিন দীর্ঘ যানজটের কারণে টোল প্লাজায় কর্মরত শ্রমিক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে যাত্রী ও চালকদের বাকবিতন্ডা লেগেই থাকে।
সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টোল প্লাজা এলাকায় দুই পাশে ৪টি করে ৮টি বুথ চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে যেতে ৪টি এবং চট্টগ্রাম শহরে আসার দিকে ৪টি বুথ রয়েছে। এই দুই পাশে আরও ১টি করে দুটি লেন বাড়ানোর কাজ দ্রæতগতিতে চলছে।
৮টি টোল বুথের সাথে নতুন দুটি টোল লেন যুক্ত হলে ১০টিতে দাঁড়াবে টোল বুথ। বর্তমানে আসা-যাওয়ায় চারটি করে মোট আটটি বুথে টোল আদায় করা হচ্ছে। নতুন টোল বুথ দুটি নির্মাণ শেষে ব্যবহার শুরু হলে টোল প্লাজা যানজটমুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীরা।
জানা গেছে, ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শাহ আমানত সেতু নতুন করে চালু করা হয়। প্রথমে টোল প্লাজায় তিনটি করে উভয় দিকে ছয়টি লেন নিয়ে সেতুর টোল আদায় কার্যক্রম চালু হলেও সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ অত্যধিক হওয়ার কারণে গত তিন বছর আগে টোল প্লাজার দুই পাশের অযান্ত্রিক যান চলাচলের জন্য রাখা ফ্রি টোল লেন দুটির পরিসর বাড়িয়ে ছোট যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে টোল বুথ করা হয়। এরপর থেকে দুপাশে চারটি করে আটটি টোল বুথে পরিণত করা হয়। তারপরও প্রতিদিন টোল প্লাজায় দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে, বিশেষ করে সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় বলে জানান স্থানীয়রা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কারণে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) এই প্রকল্পের অধীনে কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক টোল প্লাজা সংলগ্ন মহাসড়কের অ্যাপ্রোচ রোডে নতুন আরসিসি পেভমেন্ট রোড এবং ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণের কাজ শুরু করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়ার পর দুই সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু হয় বলে জানিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা।
কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজার ইজারাদার প্রতিষ্ঠান সেলভ্যান জেভির প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুমন ঘোষ বলেন, এখন গাড়ির চাপ আগের তুলনায় অনেক কম, বর্তমানে শাহ আমানত সেতু দিয়ে চলতি এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে ২৪ হাজার থেকে সাড়ে ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। যা আগের তুলনায় প্রায় ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার গাড়ির চাপ কমছে। এ সংখ্যা ঈদুল আজহার আগে আরও বাড়তে পারে। এখন ৮টি লেন দিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে, কিন্তু বিশেষ ছুটির দিনে (বৃহস্পতি, শুক্রবার ও শনিবার) চাপ বেড়ে যায়। তখন যানজটের সৃষ্টি হয়। আমরা বিষয়টি সড়ক ও জনপথ বিভাগকে বলেছি। তারা দুই পাশে আরও দুটি লেন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে ওই লেন দুটির কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব শীগ্রই নতুন যুক্ত হওয়া টোল বুথ দুটি চালু করা হবে। টোল আদায়ে বুথের সংখ্যা দুইপাশে দুটি বেড়ে ১০টি হলে তখন যানজট তেমন থাকবে না। তিনি আরো বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশার বেপরোয়া চলাচল, চালকদের শৃঙ্খলা না মানা, অতিরিক্ত গাড়ির চাপের কারণে মাঝে মাঝে যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেক গাড়ির নম্বর প্লেট ঢেকে রাখা হয়। বিভিন্ন পরিচয়ে টোল দিতে না চাওয়া, বড় টাকার নোট দেওয়া, ছোট গাড়ি বেশি, সন্ধ্যা হলে কারখানার ছুটি এসব কারণ এই যানজট বেড়ে যায়। যার কারণে আরও দুই লেন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ দুই লেন চালু হলে যানজট নিরসন হবে।