পূর্বদেশ ডেস্ক
তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে প্রতি বছর ২০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর চেষ্টা চালানোর কথা বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। পালিয়ে আসা এসব মিয়ানমার নাগরিকের তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের বিষয়ে গতকাল সোমবার এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা একটি অত্যন্ত ছোট সংখ্যা। কিন্তু ছোট সংখ্যাটা দিয়ে একটা আশা এসেছিল যে, ২০ হাজার করে প্রতিবছর, ১০ বছরে দুই লাখ নিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র- এই রকম একটা সম্ভাবনা এখনও রয়ে গেছে। যেটা যদি হয় দুই লাখ একটা সংখ্যা, সেটা আমরা চেষ্টা করতে পারি। খবর বিডিনিউজের।
তবে, এটা এখনও অনেকটা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে, দু-চারশ যাচ্ছে, এ পর্যন্ত বোধহয় আড়াই হাজারের মত গেছে, যাদেরকে তারা নির্বাচন করছে। আমরা সেটাকে ত্বরান্বিত করছি।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন (আরাকান) রাজ্য থেকে বাংলাদেশে ¯্রােতের মত ঢুকতে শুরু করে রোহিঙ্গারা।
কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়। যেখানে আগে থেকেই ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ওই বছরের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে সইও করে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে দুই দফায় প্রত্যাবাসনের উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি রোহিঙ্গারা, ফলে ভেস্তে যায় আলোচনা।
এরপর আসে কোভিড মহামারী; রোহিঙ্গাদের ওপর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগেও ঢিল পড়ে। বিশ্বজুড়ে সেই সংকটের মধ্যেই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সু চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আসে নতুন ‘বাধা’।
এখন মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে প্রত্যাবাসনের আলোচনা আপাতত বন্ধ, উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সাত বছর আগে বাংলাদেশ সীমানা খুলে দিলেও এবার সরকার কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণার মধ্যে নতুন করে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য আসছে।
প্রত্যাবাসন আটকে থাকার মধ্যে তৃতীয় দেশের পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে অল্প অল্প করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এই পর্যন্ত আড়াই হাজারের মতো রোহিঙ্গার দেশটিতে যাওয়ার তথ্য গতকাল দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ।
যুক্তরাষ্ট্র যাদেরকে বাছাই করছে, তাদের যাওয়ার বিষয়ে দুই-চারদিনের মধ্যে ‘ক্লিয়ারেন্স’ দেওয়ার উদ্যোগ নেবেন বলেও বলেছেন তিনি।
তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই মুহূর্তে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব না। এক ধরনের স্থিতিশীলতা দরকার, সেটা যে ধরনের হোক; আরাকান আর্মিও যদি চেয়ারে বসতে পারে শক্তভাবে, তাদের কোনো চ্যালেঞ্জ নাই এ রকম পরিস্থিতি দাঁড়ায়- একটা স্থিতিশীলতা আসলে তখন হয়ত সম্ভব হতে পারে।
যে পরিস্থিতিই তৈরি হোক না কেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে বলেও মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা।