দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রত্যাশা অবশেষে পূরণ করলেন রেল কর্তৃপক্ষ। গত ১ ফেব্রæয়ারি শনিবার থেকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে চালু হলো দুই জোড়া ট্রেন। সৈকত ও প্রবাল নামের ট্রেন দুটি সকাল বিকাল চারবার আসা যাওয়া করবে। তবে ৬.১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রওনা দেবে অপরদিকে সর্বশেষ রাত ৮ টায় কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে চট্টগ্রামে ফিরবে। জানা যায়, সৈকত ও প্রবালের যাত্রার শুরুর দিনে যাত্রী সাধারণের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে ট্রেন দুটি থেমে যাত্রী উঠানামা করায় সাধারণ মানুষ বেশ খুশি। জানা যায়, কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম ছুটবে প্রবাল এক্সপ্রেস। তাই আগেভাগেই স্টেশনে হাজির হতে দেখা যায় শত শত যাত্রীকে। অপেক্ষা কখন আসবে ট্রেন, কখন বাজবে হুইসেল। যাত্রীদের চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ। তাদের আশা, দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ায় রেলযাত্রা হবে ভোগান্তিহীন।
তবে যত খুশি ও আনন্দ নিয়ে সাধারণ যাত্রীরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেনে চড়ে ইতিহাসের অংশ হতে চেয়েছেন, ট্রেনে চড়েই যেন তাদের সেই ইতিহাসের পতন হলো! ইানা বিড়ম্বনা শেষে যাত্রীরা আনন্দের চেয়ে বেশি বেজার হয়ে ট্রেন থেকে গন্তব্যে নেমেছেন। গতকাল রবিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত খবরে যাত্রীদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, একটি নতুন ট্রেন চালু হলো অথচ ট্রেনের কোন সাজসজ্জা করা হয়নি, যাত্রীদেরও বরণ করা হয়নি। এ ছাড়া ট্রেন নামে নতুন হলেও কোচগুলো ছিল একেবারে পুরনো, লক্করঝক্কর টাইপের। ছিলনা ওয়াশরুমের পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা, লাইটিং এর আলো ছিলো নিবো নিবো, অপরিচ্ছন্ন সীট ও কোচগুলো এককথায় যাত্রী বান্ধব ছিল না। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন ৯.৫৫ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছার সিডিউল থাকলেও পৌঁছেছে আরো আধাঘণ্টা বিলম্বে। ট্রেনের নানা বিড়ম্বনার কথা উল্লেখ করে পূর্বদেশকে এক যাত্রী ক্ষোভের সাথে বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন যাত্রা। মনে হয়েছে, এই ট্রেনে চড়ে ইতিহাসের অংশ হবো। যার কারণে ১০দিন আগে টিকিট করেছি। কিন্তু ট্রেনের যে করুণ অবস্থা ছিল সেটা বলার মতো না। এখন মনে হচ্ছে, এটা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’ অপরদিকে স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নতুন রেলপথে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। স্টেশন মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ‘সৈকত এক্সপ্রেস’ কক্সবাজার পৌঁছানোর কথা ছিল ৯টা ৫৫ মিনিট। কিন্তু এসেছে ১০টা ২৫ মিনিটে। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম নতুন রেললাইনে কিছু কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়েছে। বিশেষ করে, হাতি চলাচলের যে স্থান রয়েছে সেখানে ট্রেনের গতির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেখানে ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলে। ৩টি স্থানে ট্রেনের গতি সীমাবদ্ধতার কারণে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা কিন্তু বেলা ১১টায় ছেড়ে গিয়েছে। প্রথম দিনে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে, পরবর্তী সময়ে সেটি ঠিক হয়ে যাবে।’ তিনি আরো জানান, ‘সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেস ওয়াশের স্থান হচ্ছে চট্টগ্রাম। তারপরও ট্রেনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে সবসময় খেয়াল রাখা হচ্ছে। চেষ্টা করছি, যাত্রীদের কাছে যেন সেবারমান বাড়ানো যায়। যদি যাত্রীদের কোনো অভিযোগ থাকে তা খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’ জানা যায়, সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা প্রায় দেড় হাজার। সপ্তাহে সোমবার ছাড়া প্রতিদিনই ট্রেন দুটি চলবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে। আমরা মনে করি, দেরিতে হলেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দুই জোড়া ট্রেন চালু করায় চট্টগ্রামবাসীর দাবি পূরণ করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। এ জন্য কতৃৃপক্ষকে আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই। কিন্তু ট্রেন চালুর আগে রেল লাইন ও সিগনেল ব্যবস্থা ঠিক আছে কিনা তা তদারকি করার দায়িত্ব ছিল রেলর কর্তৃপক্ষের। এছাড়া পুরনো ও অপরিচ্ছন্ন বগি দিয়ে ট্রেনজোড়া চালু করার মধ্যে কী বাহাদুরী রয়েছে? এটি কি কোন রকম বুঝ দেয়ার ব্যবস্থা! নাকি অন্য কিছু। অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন নতুন ট্রেন চালু করায় বাস মালিকরা বেজায় না খোশ। অতীতে বাস মালিকদেরর খুশি করার জন্য চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটের অনেক ট্রেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বাস্তবতা আমাদের জানা না থাকলেও নতুন ট্রেনের অবস্থা দেখে সাধারণ যাত্রীরা সন্দেহ করতেই পারে। আমরা মনে করি, মানুষ কোনরকম বিড়ম্বনাহীন ও আরামে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ট্রেনকে বেছে নেয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যটন শহরমুখী ট্রেনগুলো অন্তত আকর্ষণীয় ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। শুরুতেই গলদ হলে সাধারণ যাত্রীরা আগ্রহ হারাবে। রেল কর্তৃপক্ষ এতক্ষণে বিষয়টি জেনেছেন নিশ্চয়। এ ব্যাপারে আর কোন অবহেলা কাম্য নয়। আমরা আশা করি কর্তৃপক্ষ যাত্রীবন্দব ট্রেন চলাচলে নজর দেবেন।