যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনী সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

সফররত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে কেন এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে সেটা ‘বুঝতে পারেননি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এ বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আসলে এই গোলটেবিলটা…আমি ঠিক বুঝিনি আর কী। খবর বিডিনিউজের।
বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। তবে সংস্কার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব কোনো মন্তব্য করেননি বলে তিনি তুলে ধরেন। সে বৈঠকে বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। অন্য দলগুলো হল- জামায়াতে ইসলামী,নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
বেলা ১টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বৈঠক শুরু হয়। সেখানে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মুনির হায়দার।
জাতিসংঘ ঢাকা কার্যালয় আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনসিপির আহব্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহব্বায়ক সামান্তা শারমিন।
সেখানে ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ক কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের উদ্যোগে একটা গোলটেবিল বৈঠক আহবান করা হয়েছিল। এখানে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ছিলেন। সংস্কার কমিশনের প্রধানরা ছিলেন। মূলত এখানে যে সংস্কারের ব্যাপারগুলো, যেগুলো নিয়ে কমিশনগুলো করা হয়েছে সেই সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিবকে অবহিত করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমরা আমাদের আগের বক্তব্যই তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, আমরা একই কথা বলেছি। সংস্কার তো অবশ্যই করতে হবে। আমরা সংস্কারের কথা আগেই বলেছি, সেই সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু সংস্কারটা যত দ্রæত করা যায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রথম দাবি ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার। আমরা বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনী সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে হবে। এরপর সংসদ গঠনের মাধ্যমে বাকি সংস্কারগুলো করা যাবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া-এটাই আমরা বলে এসেছি।
রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বক্তব্য কী ছিল জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি এই ব্যাপারে কোনো কমেন্ট করেননি।
গোলটেবিল বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সময়সীমার কথা আপনারা বলেছেন কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ওখানে টাইম ফ্রেম নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নাই। কারণ এটা তো আমাদের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতিসংঘের তরফে বলা হয়েছে যে, এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, আপনারা বসে রিফর্ম কী করবেন, সেটা ঠিক করেন এবং নির্বাচন যা হবে বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী হবে। বাংলাদেশে যেন একটা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে এটা তিনি আশা করেছেন। পৃথিবীর মধ্যে একটা নজির সৃষ্টি করবে আগামী ইলেকশন, উনি (গুতেরেস) আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
বৈঠকের পর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা সংস্কারের ব্যাপারে কথা বলেছি। একটা ফেয়ার নির্বাচনের বিষয়ে বলেছি, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কথা বলেছি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করে বলেছেন, বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের কাজে আমাদের সহযোগিতা করবেন এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তিনি আশাবাদী।
এনসিপির আহব্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়েই তৈরি করতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক দল মিলে একটি ঐকমত্য পোষণ করতে হবে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে। জনগণের কাছে আমাদের সংস্কারের যে কমিটমেন্ট, সংস্কারের যে ধারাবাহিকতা, সেটা বাস্তবায়নের জন্য জুলাই সনদের দ্রæত বাস্তবায়নের কথা বলেছি।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশের গণতন্ত্র যে একটি সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সেটাই আলোকপাত করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রধানরা তাদের স্ব স্ব সংস্কার রিপোর্টের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছিলেন। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা তাদের দলীয় অবস্থান সংস্কার বিষয়ে তুলে ধরেছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষে আমাদের সংস্কার বিষয়ে যে অবস্থান, আমরা মনে করি, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে, বিচার ও সংস্কার জনগণের কাছে তাদের অন্যতম কমিটমেন্ট।
আমরা আমাদের এই দলীয় অবস্থান সংক্ষেপে বলেছি। জাতিসংঘ মহাসচিব ও তার জায়গা থেকে বলেছেন, তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার, তারা যেন নিজেরাই সমঝোতায় আসে। একটা ঐকমত্যে আসে। গণতন্ত্রের ট্রু এসেন্স, সেটাকে মাথায় রেখেই যেন আমরা একসাথে কাজ করি, একটি ঐকমত্যে আসতে পারি সেটাই তিনি তার জায়গা থেকে বলেছেন।
নির্বাচন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি এবং আমরা এটাই বলেছি যে, নির্বাচন কিন্তু আমরা সংস্কারের একটা প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি, সংস্কারের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখি। কোনো রকম সংস্কার ছাড়া বা সংস্কারবিহীন নির্বাচন কোনো কাজে দেবে না।
অন্য সকল রাজনৈতিক দলও এটার সাথে একমত পোষণ করে। এখানে মতপার্থক্যগুলো হচ্ছে, কোন সংস্কার কখন হবে, নির্বাচনের আগে কতটুকু হবে নির্বাচনের পরে কতটুকু হবে- এটা নিয়ে। সেটা আমরা মনে করি যে, জুলাই সনদের মধ্যে সেটা বাস্তবায়ন হলে মতপার্থক্যগুলো কেটে যাবে এবং আমরা একটা ঐক্যমতে আসতে পারব।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, এবি পার্টির পক্ষ থেকে আমরা ২/৩টা জিনিস বলেছি। আমরা বলেছি, জাতিসংঘের তিনটা প্রতিষ্ঠানে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার তিনজন আত্মীয় কাজ করছেন, আমি জাতিসংঘের মহাসচিবকে বলেছি, জাতিসংঘ যেহেতু ইনসাফ চায়, ইনসাফটা যেন শুরু হয় জাতিসংঘের নিজের অফিস থেকে।
আমরা বলেছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় শেখ হাসিনার মেয়ে কাজ করছেন, ইউএনডিপিতে শেখ রেহানার ছেলে ববি কাজ করছেন এবং ববির স্ত্রী কাজ করছে মাইগ্রেশন অর্গানাইজেশনে। আমরা বলেছি এই নিয়োগগুলোকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, ইউএনএইচসিআর এর আবাসিক প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী, আইএলও এর কান্ট্রি ডিরেক্টার, টুমো পুটিআইনেন, ডব্লিউএফপি এর আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেনি, ইউএনডিপি এর আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, ডব্লিউএইচও এর আবাসিক প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, ইউএনওপিএস এর আবাসিক প্রতিনিধি সুধীর মুরলীধরন, আইওএম এর মিশন প্রধান ল্যানস বনেউ, ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী পরিচালক ও ইউনিসেফের আবাসিক প্রতিনিধি।