মৌসুমের শুরুতে মোকামে লবণের দরপতন

1

হারুনুর রশিদ, মহেশখালী

মৌসুমের শুরুতে মোকামে লবণের দরপতন হয়েছে। লবণের মূল্য গত মৌসুমের চাইতে প্রতিমণে প্রায় ১০০ টাকা কমে যাওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই হতাশ হয়ে পড়েছেন লবণ চাষীরা। গত মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ লবণ প্রায় ৩৯০-৪১০ টাকা দরে বিক্রি হলেও চলতি মৌসুমের শুরুতেই প্রতিমণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ২৯০-৩০০ টাকা দরে। এতে বড় ধরণের লোকসানের আশংকা করছেন প্রান্তিক লবণ চাষীরা।
বিসিক সূত্রে জানাগেছে, গত বছর লবণের মোট উৎপাদন হয়েছিল ২৪ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন। গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি মৌসুমে ২৬ লাখ মেট্রিক টন অপরোশোধিত লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে দেশে আগামী অর্থ বছরে লবণের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। বিশেষ করে অনেক চাষীর হাতে অবিক্রীত লবণ মজুদ আছে।
চাষীদের সূত্রে জানাগেছে, গত মৌসুমে লবণের চড়া মূল্য থাকায় চলতি মৌসুমে লবণ চাষের জমির ইজারা মূল্য অন্তত ২০% বৃদ্ধি পায়। যার ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও কমে গেছে লবণের মূল্য। এতে লোকসানের মুখে পড়বেন চাষীরা। আগামীতে লবণের মূল্য বৃদ্ধি পাবে এমন আশাবাদ নিয়েই চাষীরা চাষে নেমে পড়েছেন।
মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউপির লবণ ব্যবসায়ি নুরুল কবির মেম্বার জানান, তিনি এক পাইকারের কাছে লবণ বিক্রি করেছিলেন। আগামীতে দাম আরও বাড়বে এই আশায় গত মৌসুমে এক হাজার মন লবণ তার হাতে মজুদ আছে।
তিনি বলেন, ‘তিন মাস আগে যে দাম পেয়েছিলাম এখন তা পাচ্ছি না। তখন মোকামে মনপ্রতি লবণের দাম ছিল ৪৪০ থেকে ৪৫০ টাকা। এখন প্রতি মন লবণ ৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’
মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের পাইকারি লবণ বিক্রেতা আব্দুর সালাম জানান, ‘চাষিদের কাছ থেকে প্রতি মন লবণ ২৯০-৩০০ টাকায় কিনেছি। এরপর লবণ কারখানায় তা বিক্রি করেছি মনপ্রতি ৩৪০ টাকায়। পরিবহন ও শ্রমিকদের খরচ বিবেচনায় নিলে প্রতি মনে তার লোকসান হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।আগের মৌসুমের লবণ মজুদ থাকায় কারখানাগুলো বেশি দামে লবণ কিনতে রাজি নন।
মহেশখালীর উপকূলীয় এলাকায় এ বছর অনেক চাষি আগাম লবণ চাষ শুরু করেছেন। কিন্তু তারা কেউই আশানুরূপ দামে লবণ বিক্রি করতে পারেননি।
মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চলে দুই ধরণের লবণ চাষ হয়। আধুনিক পদ্ধতি এবং সনাতন পদ্ধতিতে। আধুনিক পদ্ধতিতে ছট/ পলিথিন বিছানোর মাধ্যমে লবণ উৎপাদন করা হয়। সনাতন পদ্ধতিতে ছট/পলিথিন ছাড়া এঁটেল মাটি রোদে শুকিয়ে শক্ত করে এতে পানি দিয়ে লবণ উৎপাদন করা হয়।
সনাতন পদ্ধতিতে খরচ কম। আধুনিক পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন খরচ বেশি।
কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপপরিচালক জাফর ইকবাল ভুঁইয়া বলেন, লবণের কোন ঘাটতি আপাতত নেই। আশাকরি গত মৌসুমের ন্যায় চলতি মৌসুমেও লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। মাঠ পর্যায়ে লবণ পরিমাপে ওজনে বেশী লবণ নেওয়ায় চাষীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এমন দাবীও রয়েছে চাষীদের। সনাতন পদ্ধতির পরিমাপে ৪০ কেজিতে মণ হলেও লবণ পরিমাপের ক্ষেত্রে প্রতিমণে নেওয়া হয় ৫০ কেজি। এতে ১০০ মণ লবণ পরিমাপে ফাঁড়িয়ারা নিয়ে যায় ১১০ মণ। এতে পরিমাপ সঠিক হলে চাষীরা লাভবান হত।
মহেশখালী লবণ চাষী ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এডভোকেট সাহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে লবণ চাষ। চাষীরা বড় ধরণের লোকসানে পড়লে আগামীতে লবণ চাষ থেকে চাষীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে।