এম এ হোসাইন
পানির অভাবে চট্টগ্রামের অসংখ্য গ্রাহক যখন দুর্ভোগে, তখন ওয়াসার কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল সুবিধা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে প্রতিষ্ঠানটি। নগরবাসীর অনেক এলাকায় সপ্তাহে দুদিনও পানি পৌঁছায় না। এই পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা তাদের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ৯১টি স্মার্টফোন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিলাসী এমন সিদ্ধান্তে খোদ ওয়াসায় কানাঘুষা চলছে।
চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে ৩০০টি কর্পোরেট সিম নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াসা। যার মধ্যে ১০০টি প্রশাসন বিভাগ, ১০০টি প্রকৌশল বিভাগ এবং বাকি ১০০টি অর্থ বিভাগের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এসব সিম গ্রামীণফোনের কর্পোরেট সুবিধার আওতায় বিনামূল্যে পাওয়া যায়। কিন্তু মোবাইল ফোন না থাকার অজুহাতে সিমগুলো এখনও ব্যবহার করছেন না কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে ৯১টি সিম বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ করা এসব সিমের বিপরীতে হ্যান্ডসেট দাবি করেছেন কর্মকর্তারা। তাই ওই সিম ব্যবহার করতে কেনা হচ্ছে মোবাইল হ্যান্ডসেট। এসব মোবাইল কেনার জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে বিতর্কিত বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। ওয়াসা শুধু মোবাইল ফোন কিনবে না, কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণে মোবাইল বিলও পরিশোধ করবে। এজন্য বিলের একটি সীমাও নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। যদিও প্রথম শ্রেণির এসব কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই বেতনের সাথে সরকারিভাবে মোবাইল ভাতা ভোগ করে থাকেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে গত ১৩ মার্চ এক অফিস আদেশে মোবাইল বিলের সীমা নির্ধারণ করে দেন ওয়াসার সচিব শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী। সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ১ হাজার টাকা, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৬০০ টাকা, সচিব/বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক/প্রধান প্রকৌশলী ৫০০ টাকা, তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ৫০০ টাকা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও সিস্ট্রেম এনালিস্ট ৫০০ টাকা, সিনিয়র অডিট অফিসার/নবম গ্রেডের কর্মকর্তা ৩০০ টাকা, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ৩০০ টাকা, পিএটু এমডি ৩০০ টাকা ও মিটার পরিদর্শক ৩০০ টাকা বিল ধরা হয়। গত ৯ এপ্রিল জনসংযোগ কর্মকর্তা কাজী নূরজাহান শীলা স্বাক্ষরিত আদেশে বিল পরিশোধের জন্য নির্ধারিত ফরমেটে হিসাব শাখায় পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনসংযোগ কর্মকর্তা কাজী নূরজাহান শীলা বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ৯১টি সিম গ্রহণ করেছি, যা কর্পোরেট সুবিধায় বিনামূল্যে দিয়েছে গ্রামীণফোন। এসব সিম ব্যবহারের জন্য মোবাইল সেট কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোন মডেলের সেট হবে, তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তবে কম দামের সেট কেনা হবে। বিষয়টি টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
মোবাইল ভাতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সবাই তো মোবাইল ভাতা পায় না। কে কীভাবে পাচ্ছে, সেটা আমার জানা নেই।
নগরবাসী যখন পরিষ্কার পানি পেতে হাহাকার করছে, তখন কর্মকর্তাদের হাতে নতুন মোবাইল তুলে দিতে সংস্থার এমন আগ্রহে প্রশ্ন উঠেছে নগরবাসীর মধ্যে।
সূত্রমতে, কর্পোরেট সিম এবং মোবাইল সেট কেনার প্রস্তাব ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগ থেকেই আসে। কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত নম্বরের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানের নম্বর ব্যবহারের সুবিধার কথা তুলে ধরেন। প্রাথমিকভাবে ৩০০টি সিমের সিদ্ধান্ত হলেও বিতরণ করা হয় ৯১টি, যার বিপরীতে মোবাইল সেট দাবি করা হয়। ক্রয়ে বড় অঙ্ক দেখাতে না গিয়ে সেটগুলো খন্ড খন্ডভাবে কেনার পরিকল্পনা করে ওয়াসা। এই সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুল রহমান। যদিও এই প্রক্রিয়ার কোন কিছুই জানেন না দাবি করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, সিম কেনার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। মোবাইল কেনার কোন কমিটিতেও আমি নেই।