নিজস্ব প্রতিবেদক
হাটহাজারীতে অস্ত্রধারীরা গুলি করে মুহাম্মদ আবদুল হাকিম (৫২) নামে এক বিএনপি নেতাকে প্রকাশ্যে হত্যা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের মদুনাঘাট বাজারের পানি শোধনাগার মূল ফটকের সামনে এই হত্যাকান্ড ঘটে। মোটরসাইকেলযোগে আসা মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় আবদুল হাকিমকে নগরীর এভার কেয়ার হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আবদুল হাকিম রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত ছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত হাকিম দলের কোনো পদে ছিলেন না। তবে স্থানীয়ভাবে তিনি একজন প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি হামিম এগ্রো নামে একটি গরুর খামারের মালিক ছিলেন।
সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে মুহাম্মদ আবদুল হাকিম তার গ্রামের খামারবাড়ি থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে নগরে আসছিলেন। তার পাশে বসা ছিলেন এক সহযোগী। গাড়িটি দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়নের মদুনাঘাট বাজারের পানি শোধনাগার ফটকের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে মোটরসাইকেলে আসা কয়েকজন অস্ত্রধারী গুলি চালায়। গাড়ির কাচ ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করা গুলিতে আবদুল হাকিম মারাত্মকভাবে আহত হন। তার সঙ্গে থাকা সহযোগীও গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা দ্রæত তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আবদুল হাকিমের মৃত্যু হয়েছে। তার ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি ঘটনাস্থলে পড়ে থাকতে দেখা যায়, যা পরবর্তীতে পুলিশ জব্দ করে।
রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাকিম স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ভেষজ পণ্যের ব্যবসা ও গরুর খামার পরিচালনা করতেন। পাশাপাশি গত এক বছর ধরে কর্ণফুলী নদী থেকে বালু উত্তোলনের ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাউজান অঞ্চলে বিএনপি পুনরায় সংগঠিত হতে শুরু করলে আবদুল হাকিম তৎপর হয়ে ওঠেন। গিয়াস কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে এলাকায় দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখছিলেন। তবে দলে তার আনুষ্ঠানিক কোন পদ ছিল না।
কে বা কারা, কেন তাকে গুলি করেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক উভয় দিক থেকেই হত্যার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাউজানে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছিল, যা একাধিকবার সহিংস সংঘর্ষে রূপ নেয়। অন্যদিকে, বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করেও তার সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী মহলের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভ‚ঁইয়া বলেন, গুলির ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। গাড়ি থেকে গুলির খোসা, রক্তাক্ত কাপড় ও অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পেছনে কারা জড়িত তা জানতে তদন্ত চলছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আবদুল হাকিমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরিবারের সদস্য ও দলের নেতাকর্মীরা সেখানে ভিড় করেন।
বিএনপি নেতারা বলেছেন, নিহতের জানাজা আজ রাউজানের নিজ গ্রামে অনুষ্ঠিত হবে। তারা অভিযোগ করেছেন, সরকারের অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই চট্টগ্রামে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড বেড়ে যাচ্ছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) তারেক আজিজ বলেন, একদল মোটরসাইকেল আরোহী অস্ত্রধারী আবদুল হাকিমের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাউজান এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য আলোচিত। গত ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত এলাকায় ১৩টি হত্যাকান্ড ঘটেছে, যার মধ্যে অন্তত ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড বলে জানা গেছে। বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছে শতাধিকবার। এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ।











