মোকাবিলায় নিতে হবে যথাযথ পদক্ষেপ

1

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্রে যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে তা রীতিমত আতঙ্ক ও শঙ্কার। পুরো শীত মৌসুমে কোন বৃষ্টি না হওয়া, বসন্তের হালকা বৃষ্টি ও স্নিগ্ধ হাওয়া প্রচন্ড উত্তাপে মিলিয়ে যাওয়ার ফলে চৈত্রের খরায় উষ্ঠাগত হয়ে পড়ছে দেশের মানুষ। এরমধ্যে আবহাওয়া পর্যক্ষেণ টিম নামের একটি সংস্থা খবর দিয়েছে আসছে বৈশাখে প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড়, তুফান ও বজ্রপাত হতে পারে। হতে পারে ভারি বৃষ্টি। বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) নামের সংস্থাটির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । সংস্থাটি জানায়, চলতি বছরের দ্বিতীয় ক্রান্তীয় বৃষ্টিবলয় এটি। চট্টগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগে বেশি সক্রিয় হতে পারে ও পরবর্তী সময়ে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশের অনেক এলাকায় সক্রিয় হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকবে সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগে। মাঝারি ধরনের সক্রিয় থাকবে রাজশাহী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে এবং কম সক্রিয় থাকবে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে।
এ অবস্থায় আমাদের প্রস্তুতি কী? তা নিয়ে এখন থেকে মনোযোগী হতে হবে সরকারকে। মার্চ-এপ্রিলকে ঘর্ণিঝড়প্রবল মাস বলা হয়। অতীতে দেখা গেছে যত বড় বড় ঘর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে সবকটিই মার্চ-এপ্রিলেই হয়েছে। ১৯৯১ সালের ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের পর সরকারের নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ফলে বাংলাদেম বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় যথেষ্টতা সফল হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার ও মানুষকে সচেতন করার বিষয়টি আরো অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। গত বছর সিলেট, ফেনী, নোয়াখালী, মিরসরাই ও ফটিকছড়ির বন্যা আমাদের দূর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে অনেকগুলো দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। বন্যাকালীন দূর্যোগ এলাকায় ত্রাণসহায়তার ক্ষেত্রে যে বিশৃঙ্খল অবস্থা লক্ষ করা গেছে এর মূলেই রয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহারে দূর্বলতা। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বড় ধরণের ক্ষতির আশংকা করছেন স্বয়ং পরিবেশ উপদেষ্ঠা। গত সোমবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা, ভৌগোলিক অখÐতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি। ঢাকার ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি আরও বলেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূল ধ্বংস এবং জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতির কারণে কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে নতুনভাবে মানচিত্র আঁকতে হতে পারে। উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞরা নানা পরামর্শ দিলেও বিভিন্ন মহলে বিষয়টি এখনো যথাযথভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। যার মূল্য আমাদের দিতে হবে ভবিষ্যতে। জানা যায়, চলতি শতকের মাঝামাঝি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে ২১টি উপকূলীয় জেলার উল্লেখযোগ্য অংশ সমুদ্রের পানিতে ডুবে যেতে পারে। এতে গৃহহীন হবে কোটি মানুষ। কৃষি ও মাছচাষে ব্যবহৃত নদীগুলোয় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করবে। উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু লবণাক্ততা সমস্যাই নয়, আমাদের দেশে আরও অনেক সমস্যা দেখা দেবে। বস্তুত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের ভূখন্ড কমে যাওয়া, বিপুল জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল ডুবে যাওয়াসহ আরও যেসব সমস্যা দেখা দেবে, তা বহুল আলোচিত। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জীবন-জীবিকা মূলত কয়েকটি খুঁটির ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে, যার অন্যতম কৃষি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কৃষিক্ষেত্রটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাত হিসাবেও বিবেচিত। কারণ, এর উৎপাদনশীলতা পুরোপুরি নির্ভর করে তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, রৌদ্রের সময়কাল এবং জলবায়ু সম্পৃক্ত কারণগুলোর ওপর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে গ্রীষ্ম ও শীতকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধির অস্বাভাবিক আচরণও লক্ষ করা যাচ্ছে। জলবায়ু পরির্তনের কারণে নদীভাঙন বাড়ছে। জলবায়ুর এ বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন অভিযোজন কৌশল রপ্ত করতে হবে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কৃষিকে মুক্ত রাখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিকে টেকসই অবস্থানে টিকিয়ে রাখতে হলে ফসলের সহনশীল জাত উন্নয়নে জোর দিতে হবে। লক্ষ করা যাচ্ছে, এ বিষয়ক বিভিন্ন চুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্ববাসী ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এটা দুঃখজনক। এ বিষয়ক বিভিন্ন চুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্ববাসীকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। এ বিষয়ক ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদেরও নিজ উদ্যোগে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।